মহিলারা দিচ্ছেন বিয়ে। ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে।
বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান বিয়ের অন্যতম আকর্ষণ। শুভদৃষ্টি, মালাবদলের মতো অনুষ্ঠান দেখতে বিয়ের মণ্ডপে উপচে পড়ে ভি়ড়। আবার কন্যাদান বা কনকাঞ্জলির মতো কিছু রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে সমাজে। কিন্তু আচার সর্বস্বতা ছাড়া কি বিয়ে সম্পূর্ণ হতে পারে না? এই প্রশ্ন তুলে নিজের মেয়ের বিয়েতে কন্যাদান, কনকাঞ্জলির মতো কিছু রীতি মানলেন না অম্লান রায়। শুধু তাই নয়, বাংলায় মন্ত্র পড়া মহিলা পুরোহিত জোগাড় করে ৪ ফেব্রুয়ারি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বিয়ের সময় পাত্রীর বাবা পাত্রের হাতে তুলে দেন নিজের মেয়ের দায়িত্ব। সেই রীতিরই গাল ভরা নাম কন্যাদান। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই রীতি মেনে নিতেই ঘোর আপত্তি রয়েছে অম্লানবাবুর। পেশায় বিজ্ঞানী কলকাতা এয়ারপোর্ট এলাকার ওই বাসিন্দার কথায়, ‘‘মেয়ে কি আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি যে তাঁকে দান করা যায়?’’ এরপর কন্যাদান রীতিকে অস্বীকার করার পিছনে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও নিজের যুক্তি সাজিয়েছেন তিনি। মনু-বেদ থেকে উদাহরণ টেনে তিনি বলছেন, ‘‘বেদে বিভিন্ন রকমের বিয়ের উল্লেখ রয়েছে। এরমধ্যে ব্রাহ্ম বিবাহ ছাড়া প্রজাপতি বা গান্ধর্ব্য বিবাহের মতো অন্য পদ্ধতিতে কন্যাদানের কথা উল্লেখ নেই। আমার মেয়ে নিজে পাত্র পছন্দ করে বিয়ে করেছে। তাই বেদের কথা ধরলেও এটি ব্রাহ্ম বিবাহ নয়।’’
অর্থ না বোঝা জটিল কঠিন মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে রীতি পালন নয়। সহজ বোধগম্য উপায়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। সে জন্যই এ সব ‘নিয়ম কানুন’কে অগ্রাহ্য করে মেয়ের বিয়ের জন্য ঠিক করেছিলেন মহিলা পুরোহিত। তাঁরা বাংলায় মন্ত্র পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন অম্লানবাবুর মেয়ে সায়নী রায়ের।
সমাজের গতানুগতিকতার বাইরে হাঁটতে গিয়ে অন্যের কাছে থেকে দু-চার কথা শুনতেও হয়েছে অম্লানবাবুকে। কেউ বলেছেন, ‘নিয়ম মানা হল না।’ তো কেউ বলেছেন, ‘কন্যাদান যুগ যুগান্তর ধরে হয়ে এসেছে। ওটা ছাড়া আবার বিয়ে হয় নাকি!’ তবে এ সব কথায় বিচলিত হওয়ার পাত্র নন তিনি। কারণ তাঁর কাছে, ‘বিয়ে মানে শুধুই কন্যাদান নয়।’
কলকাতায় এই প্রথম বাংলায় মন্ত্র পড়ে বিয়ে হল, ব্যাপারটা মোটেও এ রকম নয়। অম্লানবাবুর মেয়ের বিয়ে দেওয়া নন্দিনী ভৌমিক এর আগেও বাংলায় মন্ত্র পরে বিয়ে দিয়েছেন। আর অম্লানবাবুও হুট করে এ কাজ করেননি। বছর পাঁচেক আগে, আবাসনে প্রতিবেশীর মেয়ের বাংলায় মন্ত্র পড়ে বিয়ে হওয়া দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি। তারপরেই মনে মনে ভেবে নিয়েছিলেন, নিজের মেয়ের বিয়ে এ ভাবেই দেবেন।
অম্লানবাবুর ইচ্ছাপূরণে নন্দিনী ভৌমিকের ‘শুভমস্তু’-র সদস্যাদের ভূমিকা কিছু কম নয়। তাঁরাই বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় মন্ত্রচারণ ও রবীন্দ্রনাথের গানের মাধ্যমে সায়নীর বিয়ে দিয়েছেন। এই বিয়েতে কন্যাদান না থাকার প্রসঙ্গে তিনি নন্দিনী দেবী বলেছেন, ‘‘যে সকল রীতি বর বা কনেকে হেয় করে, সে রকম কোনও রীতিই আমাদের বিয়েতে থাকে না।’’ বিয়ে ছাড়াও অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধ ও গৃহপ্রবেশের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান অনন্য পদ্ধতিতে করে থাকেন তাঁরা। এই ব্যতিক্রমী কাজের মধ্যে দিয়েই বৈষম্যহীন উন্নততর সমাজ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন নন্দিনীদেবীরা।
আরও পড়ুন: মা উড়ালপুলের নয়া বর্ধিত সেতু আজ খুলে দেওয়া হল জনসাধারণের জন্য
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরাবাংলা খবরজানতে পড়ুন আমাদেরকলকাতাবিভাগ।)