শুনশান হোটেলে সময় কাটছে মোবাইলে। নিজস্ব চিত্র
পর্যটক-শূন্যই হয়ে রয়েছে আমবাঙালির অন্যতম পছন্দের গন্তব্য বোলপুর, শান্তিনিকেতন। যে তল্লাট ফি-দিন প্রায় কয়েক হাজার দিশি-বিদেশি পর্যটকে মুখর থাকে, তা আজ শুনশান। কার্যত মাছি তাড়াচ্ছে হোটেল, রিসর্ট। টিকে থাকতে এখন নানা খরচ কমিয়ে হোটেল, লজ চালু রেখেছেন মালিকেরা।
বোলপুর, শান্তিনিকেতনে দুটি সরকারি পর্যটন নিবাস সহ ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ টির উপর হোটেল, রিসর্ট রয়েছে। যার বেশির ভাগ সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই খুলে গিয়েছে। কিন্তু, করোনা আতঙ্কের কারণে এখনও দেখা নেই পর্যটকের। শুধু তাই নয়। রাজ্যের লকডাউন নির্দেশিকা ছাড়াও জেলা প্রশাসনের লকডাউন চলেছে। ফলে ঝুঁকি নেননি অনেকেই। ট্রেন না-চলায় আসারও উপায় নেই অনেকের। ভরসা শুধু ব্যক্তিগত অথবা ভাড়ার গাড়িতে পর্যটনের স্বাদ। তাতেও আছে ভয়। তারই প্রভাব পড়েছে পর্যটনে।
বিভিন্ন লজ, হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগে মাসে ছোটখাটো হোটেলগুলিতেও ২০-৩০ হাজার টাকা এবং মাঝারি ও বড় রিসর্টগুলিতে মাসে কমপক্ষে লাখখানেক টাকার ব্যবসা হত। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে লাভ তো দূরের কথা, হোটেলের খরচটুকুও উঠছে না বলে জানাচ্ছেন হোটেল মালিকেরা। তাঁদের হিসেবে আগে এক মাসে যেখানে প্রতিটি হোটেলে কম করে ১৮০-২০০ পর্যটক এসে থাকতেন। সেখানে গত এক মাসে কোনও হোটেলে ১০ জন তো কোথাও ৭-৮ জন এসেছেন। ফলে হোটেল খোলা থাকলেও চালানোর যা খরচ তা উঠছে না। এখন আবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জীবাণুমুক্ত করার খরচও।
হোটেল মালিক সুমিত ঘোষ, রুদ্রপ্রতাপ রায়, পরিমল চৌধুরী, রাজদীপ সরকাররা জানান, এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন অতীতে কোনও দিন হননি। একটি হোটেল চালাতে গেলে বিদ্যুতের বিল, কর্মীদের বেতন, তাঁদের খাওয়া-দাওয়া, রক্ষনাবেক্ষণ সব মিলিয়ে ছোট হোটেল হলেও প্রতিদিন গড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার উপর খরচ আছে। বড় হোটেলে খরচ আরও বেশি। কিন্তু, পর্যটক না হওয়ায় এখন সেই টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘এই রকম চলতে থাকলে কত দিন হোটেল খোলা রাখতে পারব বলতে পারছি না।’’ পর্যটকের অভাবে কিছু হোটেল ইতিমধ্যেই বন্ধও হয়েছে।
ব্যয় সংকোচনের পথে গিয়েছেন বেশ কিছু হোটেল মালিক। খরচ কমাতে কোথাও পাঁচ কর্মীর জায়গায় দু’জন কর্মী দিয়ে আবার কোথাও ১০ জন কর্মীর জায়গায় পাঁচ কর্মী দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বোলপুর, শান্তিনিকেতন হোটেল মালিক সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘জুন মাস থেকে হোটেল খোলার পরে পর্যটক আসেননি বললেই চলে। এই রকম পরিস্থিতি চলতেই থাকলে হোটেল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।’’