রঙিন: আবির নিয়ে মেতে পর্যটকেরা। বড়ন্তিতে। নিজস্ব চিত্র
দোলে পুরুলিয়ার পলাশের টানে আগে থেকেই অনেকে হোটেল-লজ ‘বুক’ করে রেখেছিলেন। শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব বাতিল হওয়ায় শেষ মুহূর্তে সেই ভিড়ও এসে পড়েছে পুরুলিয়ায়। সব মিলিয়ে সপ্তাহান্তে পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড় থেকে বড়ন্তিতে উপচে পড়ল ভিড়। পর্যটনকেন্দ্রে ঠাঁই পেতে হোটেল থেকে লজে দৌড়তে হল অনেককেই।
বসন্তে পলাশ-রাঙা পুরুলিয়ার টানও অমোঘ। পাহাড়ের গা থেকে জলাধারের পাড়— লালে লাল। তাই ঠান্ডা কমে গেলেও এই সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা থাকেই। তার উপরে এ বার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মধ্যে দোল পড়ে যাওয়ায় আগে থেকেই অনেকে খোঁজখবর নিয়ে হোটেল, লজ, রিসর্ট বুক করে রাখেন।
কার্যত শনিবার থেকেই অযোধ্যাপাহাড়, গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি, জয়চণ্ডীপাহাড় প্রভৃতি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল। রবিবার আরও পর্যটক ভিড় করেন। তাঁদের মধ্যে শান্তিনিকেতন যেতে না পারা অনেকে রয়েছেন। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ‘সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদ’-এর অযোধ্যাপাহাড়ের অতিথি আবাসের দায়িত্বে থাকা সুশান্ত খাটুয়া বলেন, ‘‘দোল উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই অতিথি আবাসের সমস্ত ঘরই বুকড। অনেকে পরে ঘরের খোঁজে এসেছিলেন। ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।’’ জয়চণ্ডীপাহাড়ের অতিথি আবাসের দায়িত্বে থাকা মলয় সরখেলের কথায়, ‘‘ফোনে কত অনুরোধ যে ফিরিয়েছি গোনা নেই। তবে অনেকে সামনাসামনি এসে অনুরোধ করায় যতজনকে পেরেছি, থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’
দোল উপলক্ষে বরাবরই উপচে পড়ে বড়ন্তির সমস্ত আতিথি আবাস। এ বারও ব্যতিক্রম হয়নি। বড়ন্তির প্রকৃতিভ্রমণ কেন্দ্রের একটি অতিথি আবাসের ম্যানেজার মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্ত ঘর, এমনকি, সব তাঁবু পর্যন্ত ভর্তি। আগামী শনিবার পর্যন্ত জায়গা নেই।’’ গড়পঞ্চকোট প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রের ম্যানেজার সুমন করও জানান, অনেকেই থাকার জায়গার জন্য যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কাউকে দিতে পারছেন না।
এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছিল পুরুলিয়ার শীতের পর্যটনে। তাই শেষ শীতে পর্যটকদের ভিড়ে উচ্ছ্বসিত পর্যটন ব্যবসায়ীরা। জেলা হোটেল-লজ মালিক সংগঠনের মুখপাত্র মোহিত লাটা বলেন, ‘‘আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় কখনও দোলে পুরুলিয়ায় এত পর্যটক দেখিনি। ঘর না পেয়ে হোটেলের লাউঞ্জেও অনেকে রাত কাটিয়েছেন। শীতে ব্যবসা না জমার দুঃখ দোলে পুষিয়ে গেল।’’ অযোধ্যাপাহাড়ের গাইড বেণু সেনের মতে, ‘‘২৫ ডিসেম্বর বা ১ জানুয়ারি এত পর্যটক পাইনি। এ বারে শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব না হওয়ায় অনেকেই পুরুলিয়ায় চলে এসেছেন।’’
কাঁচড়াপাড়া থেকে অযোধ্যাপাহাড়ে এসেছেন সুমিত দেবনাথ, অর্ণব সাহা, শ্যামনগরের প্রদীপ্ত সাহারা। তাঁরা বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার দোলের রূপের কথা শুনেছিলাম। তাই চলে এসেছি। কিন্তু এত ভিড় হবে, ভাবিনি।’’