বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে বিকল্প পৌষমেলায় পৌঁছলেন বাউলেরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
আজ, বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনের সবচেয়ে বড় উৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণ। পৌষমেলা আর পৌষ উৎসবের সূচনালগ্ন। তার ঠিক আগে যেন এক অদ্ভুত শীতলতা ছড়িয়ে রইল বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস জুড়ে।
বুধবার পৌষমেলার সাবেক মাঠ ঘুরে দেখা গেল, গজিয়ে ওঠা বড় বড় ঘাসের মাঝে চরে বেড়াচ্ছে পাখি। দুপুরের রোদে ব্যাট-বল হাতে সব বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন মাঠে। কিছুটা নিভৃতির খোঁজে দেখা মেলে যুগলেরও। মেলার কোনও চিহ্ন নেই।
অন্য বছর ৬ পৌষের সন্ধ্যার মধ্যেই মেলা তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়। মেলামুখী মানুষের ভিড়ও বাড়তে শুরু করে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও চালু করা হয় প্রশাসনের তরফ থেকে। জিলিপি আর পাঁপড় ভাজার সুগন্ধ, লাগাতার বিভিন্ন ঘোষণা তৈরি করে দেয় মেলার আবহ।
সারা বছর শুধু এই ক’টি দিনের অপেক্ষায় থাকেন বিশ্বভারতীর বহু পড়ুয়া থেকে অধ্যাপক, প্রাক্তনী । লাখো স্মৃতি চাঙ্গা হয়। লালপাড় সাদা শাড়ি আর সাদা পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত পড়ুয়া, আশ্রমিক বা প্রাক্তনীদের উপস্থিতিতে সাড়ম্বরে পালিত হত পৌষ উৎসবও। ছাতিমতলার বিশেষ উপাসনা অন্যতম দ্রষ্টব্য থাকে অনেকের।
এই বছরও পৌষ উৎসব আয়োজিত হবে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সেখানে প্রবেশাধিকার সর্বাংশে নিয়ন্ত্রিত। বিশ্বভারতীর হস্টেলগুলিও বন্ধ। তাই ভোরবেলায় ছাত্রাবাস আর ছাত্রীনিবাসগুলি থেকে দল বেঁধে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গাইতে ছাতিমতলার দিকে যাওয়া পড়ুয়াদেরও দেখা মিলবে না এই বছর। সব মিলিয়ে মন খারাপ শান্তিনিকেতনের। বিষাদে ডুবে রয়েছে চত্বর।
সাবেক পৌষমেলার মাঠ খাঁ খাঁ করছে। বুধবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
পৌষমেলা আয়োজন করতে না পারার পিছনে কে দায়ী, সেই তর্কেও এখন অনেকের অনীহা। প্রাক্তন পড়ুয়া নরেশ দাসের কথায়, “প্রায় ৪০ বছর আগে বিশ্বভারতীর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক চুকে গিয়েছে। কিন্তু, আত্মিক সম্পর্কটা আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। তাই প্রতি বছর পৌষমেলায় শান্তিনিকেতনে আসি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপিকা বলেন, “১৪০০ সাহিত্য, চাঁদের হাটের মতো স্টলগুলিই তো মেলার গর্ব। ব্যবসা বা লাভের গন্ডি পার করে এই মেলাকে এরাই মিলন মেলা করে তুলেছিল।’’
বাংলাদেশের পড়ুয়া ঐশ্বীমনি দাসের আবার আশা, “মাসের পর মাস বাড়ি থেকে দূরে থাকার পরেও ডিসেম্বরে সিমেস্টার শেষ হওয়ার পরেই আমরা বাড়ি ফিরতাম না শুধু পৌষমেলার আমেজটা ছাড়ব না বলেই। আমার বিশ্বাস কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় আগামী বছরে আবার মেলাকে তার যথাস্থানে ফিরিয়ে আনবেন।”