এখন গন্ধেশ্বরী। নিজস্ব চিত্র।
দ্বারকেশ্বর-গন্ধেশ্বরী রিজ়ার্ভার প্রকল্প এ বার বাস্তবায়ন করুন— বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীকে ফোন করে এমনই দাবি জানালেন ওই কেন্দ্রেরই সদ্য প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। রাজনৈতিক যুযুধান দু’দলের প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদের মধ্যে প্রায় মিনিট তিনেক কথপোকথন হয় ওই প্রকল্প নিয়ে। অরূপ প্রকল্পটি নিয়ে সদর্থক পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। সব রকম সহযোগিতা করার কথা দেন সুভাষও।
নির্বাচনে প্রচার পর্বে সুভাষকে বিঁধে নানা মন্তব্য করেন অরূপ। সুভাষও অরূপের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এ দিন প্রথমে অরূপকে ওই প্রকল্পের সামগ্রিক রিপোর্ট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান সুভাষ। তারপর ফোন করেন সাংসদকে।
দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরী নদীর একাধিক জায়গায় বাঁধ ও ব্যারাজ গড়ে বর্ষার জল ধরে রাখার দাবি দীর্ঘদিনের। আন্দোলন শুরু করে ‘গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটি’। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জেলায় পানীয় জলের সঙ্কট দূর হবে, বাঁকুড়া সদর মহকুমার বিস্তীর্ণ অসেচ জমি সেচের আওতায় চলে আসবে। মাছ চাষও হবে। বামফ্রন্ট সরকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। কিন্তু আর এগোয়নি।
সূত্রের খবর, ওই প্রকল্পে দ্বারকেশ্বরের উপরে ছাতনার সুকনিবাসা ও গন্ধেশ্বরীর ক্ষেত্রে ছাতনার চামকেড়া গ্রামে দু’টি জলাধার তৈরির পরিকল্পনা হয়। দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরীর মিলনস্থলের কাছে বাঁকুড়ার প্রতাপপুরে উচ্চ জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ব্যারাজ তৈরির পরিকল্পনা ছিল। দু’টি জলাধার থেকে চারটি করে মূল ক্যানাল ও প্রতাপুরের ব্যারাজ থেকেও একটি মূল ক্যানাল তৈরি করে চাষের জন্য জল বণ্টনের পরিকল্পনাও ছিল। তবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
এ দিন প্রতাপপুরে প্রস্তাবিত ব্যারাজের এলাকা পরিদর্শনে যান সুভাষ। ২০১৯ সালে বাঁকুড়ার সাংসদ হওয়ার পরে তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার আশ্বাস দেন। কাজ এগোয়নি। এ জন্য রাজ্যের তৃণমূল সরকারের অসহযোগিতাকে বারবার দায়ী করেছেন তিনি। অন্যদিকে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য সুভাষকে পাল্টা দায়ী করে লোকসভা নির্বাচনে প্রচার চালান অরূপ।
এ দিন ফোন কাটার পরেই দু’জনের মধ্যে বিষয়টিকে নিয়ে ফের রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়। সুভাষের অভিযোগ, “কেন্দ্রের তরফে বারবার প্রকল্পটি নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়। আলোচনায় দিল্লিতে ডাকা হয়। কিন্তু তৃণমূল সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে সাড়া না দেওয়ায় প্রকল্পটি এগোয়নি। এখন এখানে তৃণমূলেরই সাংসদ। তাঁর দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে বুঝিয়ে প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।” পাল্টা অরূপ বলেন, “১০ বছর ধরে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার রয়েছে। সুভাষবাবু প্রকল্পটি নিয়ে কেবল অন্ধকারে হাতড়ে বেড়িয়েছেন। আমিই তাঁর কাছে এই প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকার রিপোর্ট চেয়েছিলাম। তিনি উল্টে আমাকে রাজ্যের তৈরি পরিকল্পনা রিপোর্টই পাঠান। কেন্দ্র যে রাজ্যকে এই প্রকল্পটি নিয়ে কোনও তদারকি করেছিল, এমন কোনও তথ্য সুভাষবাবু আমাকে দিতে পারেননি।’’
অরূপ জানান, গন্ধেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বরে জলাধার করতে গেলে কয়েকটি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মতো অবস্থা হত। তাই প্রকল্পের পরিকল্পনায় কিছু বদল আনা হচ্ছে। জেলা ও রাজ্য প্রশাসন এ নিয়ে নতুন পরিকল্পনা রিপোর্ট তৈরি করছে। শীঘ্রই সেই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠিয়ে প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে চাপ দেওয়া হবে।
‘গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও’ কমিটির যুগ্ম সহ-সম্পাদক সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রকল্পটি রূপায়নে বহু আগে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জনশুনানি পর্যন্ত হয়েছিল। তারপর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্রকল্পটি আটকে যায়। রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এ বার সেই জট কাটানো হোক।’’
বাঁকুড়ার চাষি তপন পাত্র, প্রদীপ শিট বলেন, “সেচের জল পাই না বলে বছর বছর চাষে মার খাচ্ছি আমরা। নেতাদের অনুরোধ, রাজনীতি দূরে সরিয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করুন।”