খুদেকে গাছ লাগাতে সাহায্য বিভাগীয় বনাধিকারিকের। দুবরাজপুর রেঞ্জের আসানশুলিতে মঙ্গলবার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
রাজ্যের পাশাপাশি বীরভূমেও বন মহোৎসবের সূচনা হল মঙ্গলবার। এই দিনটিতে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ধরনের ২৫ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করার লক্ষ্য নিয়েছে বনবিভাগ। বীরভূমে গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল এক দিনে আড়াই লক্ষ। উৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি এ দিন হয়েছে দুবরাজপুর রেঞ্জের বক্রশ্বেরধাম লাগোয়া আদিবাসী গ্রাম আসানশুলিতে।
উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ পূর্ব চক্রের মুখ্য বনপাল বিদ্যুৎ সরকার, বীরভূমের বিভাগীয় বনাধিকারিক দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ মহান্তি, সহ বনাধিকারিক শ্রীকান্ত ঘোষ, রেঞ্জ অফিসার কেশব চক্রবর্তী। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, যুগ্ম বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যেরা। আসানশুলি গ্রাম ঘেঁষা বনভূমিতে সকলে একযোগে লাগালেন বট, শিরীষ, হলদি, কসাই, তেতুঁলের মতো দেশজ গাছ, যেগুলি বনক্ষেত্রে থেকে লোপ পেয়ে যাচ্ছে। পশুপাখিদের খাবার জোগানেও টান পড়ছে। এ দিন বৃক্ষরোপণে হাত লাগান পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় আসা সিআরপিএফের ১০১ ব্যাটালিয়নের অধিকারিক ও জওয়ানেরা।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ত কয়েক বছরে রাজ্যে বনভূমির পরিমাণ বা সবুজের আচ্ছাদন বেড়েছে। কয়েক বছর আগেও বনভূমির পরিমাণ ছিল ১৩ শতাংশ। এখন তা ২১ শতাংশ। বনকর্তাদের কথায়, গোটা রাজ্যে ৩৩ শতাংশ বনভূমি বা সবুজে ঘেরা হলে, তা হবে স্বস্তিদায়ক। সেই নিরিখে বীরভূমে বনভূমির পরিমাণ অনেক কম। এই মুহূর্তে জেলার বনভূমির পরিমাণ ৪ শতাংশ। জেলার বনবিভাগ বনভূমি বাড়াতে এবং তার মান উন্নত করতে নানাবিধ কর্মসূচি নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আকাশমণি ও সোনাঝুরি গাছ লাগানো বন্ধ করে দেশজ (রেয়ার এনডেনজারড অ্যান্ড থ্রেটেন্ড স্পিসিস) বা বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির যে-সব গাছ পশুপাখির খাবার জোগায়, অথচ জঙ্গল থেকে লোপ পেয়ে যাচ্ছে, সেই সব গাছের সংখ্যা বাড়াতে।
সামনের মরশুমে মহুয়া, গাব, শাল, পিয়াশাল, কুসুম, হলদি কসাই, তেতুঁলের মতো নানা গাছ লাগানো হবে। বন দফতরের দাবি, এতে বনক্ষেত্রের পরিমাণ ও মান বাড়বে। বাঁচবে বন্যপ্রাণ। বাড়বে জীববৈচিত্র্য। সেই লক্ষ্য বজায় থাকল বন মহোৎসবের সূচনায়ও। গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা এবং বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি সেই গাছকে শিশুর মতো আগলে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানান বনকর্তারা। তাঁরা জোর দেন, এই অভিযানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সক্রিয় ভাবে যুক্তকরার বিষয়টিতে।
মুখ্য বনপাল বলেন, ‘‘সবুজ না থাকলে আমাদের জীবণ অপূর্ণ। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও না কোনও ভাবে আমরা গাছের উপরে নির্ভর করি। বাতাসে জলে যে দূষণ, তার থেকে মুক্তির উপায় গাছ।’’ পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি গাছ লাগানোর একটি অর্থকরী দিকও আছে বলেও তিনি জানান।