ওষুধের প্রভাবে শান্ত। পাত্রসায়র রেঞ্জ অফিসে। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘদিন ধরে পাত্রসায়র ও ইন্দাসের বেশ কিছু এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিল একটি পূর্ণবয়স্ক হনুমান। প্রায় দেড় মাস ধরে বন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার পরে, শুক্রবার পাত্রসায়রের দেউলির মাঝপাড়ায় ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হল সে। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) ভাস্কর জে ভি বলেন, ‘‘হনুমানটি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল। অনেক বার খাঁচা ও জাল নিয়ে ধরার চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। একের পর এক মানুষকে আক্রমণ করছিল বলেই ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ধরতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, চিকিৎসা চলছে। হনুমানটিকে নিয়ে কী করা যাবে, পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বন দফতরের কর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই হনুমানটি বিউর, বেতুড়, রসুলপুর, ইন্দাস, বীজপুর প্রভৃতি জায়গায় তাণ্ডব চালাচ্ছিল। রসুলপুরের আজফর হুসেন বলেন, ‘‘মাস দু’য়েক আগে রসুলপুর বাজারে গিয়ে কয়েকজনকে কামড়ে দেয় হনুমানটি। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে অনেককেই আহত করে সে। ওকে দেখলেই সবাই ভয়ে থাকত।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কয়েক দিন আগে পাত্রসায়রের একটি গ্রামের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে ঢুকে পড়ে গোলমাল পাকায় হনুমানটি। তবে সে মোটরবাইক আরোহীদের মোটেই পছন্দ করত না। সুযোগ পেলে বাইক আরোহীদের উপরে হামলা করত।
তবে পাত্রসায়রের রেঞ্জ অফিসার শিবপ্রসাদ সিংহ জানান, সম্প্রতি খাঁকি পোশাকে পুলিশ বা বন দফতরের কাউকে দেখলেই দূর থেকে এসে তাঁর উপরে হনুমানটি ঝাঁপিয়ে পড়ত। সিভিক কর্মী ও বন দফতরের কর্মীরা সেটির উপরে নজরদারি করছিলেন বলে এমনটা হতে পারে।
বনকর্মীরা জানান, মাস দেড়েক ধরে তাঁরা এক দিন অন্তর জাল ও খাঁচা নিয়ে হনুমানটিকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু কোনও ভাবেই তাকে বাগে আনা যাচ্ছিল না। বার বার বন দফতরের কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার পাত্রসায়রের বিট অফিসার বাসুদেব বাউরি বীজপুর গ্রামে হনুমানটিকে ধরার চেষ্টায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকেও আক্রমণ করে হনুমানটি। কোনও রকমে তিনি রক্ষা পান।
এর পরে বিশেষ অনুমতি নিয়ে বেলিয়াতোড় ও রাধানগর থেকে ঘুমপাড়ানি গুলি চালানোর বিশেষজ্ঞ দলকে নিয়ে আসা হয় শুক্রবার। আগের রাত থেকেই হনুমানটির উপের নজর রাখা হয়েছিল। বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের দেউলি মাঝপাড়ায় একটি বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিল হনুমানটি। সেখানে তার উপরে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। পরে খাঁচায় ভরে পাত্রসায়র রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। শিবপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘হনুমানটির চিকিৎসা চলছে। দিন পনেরো পর্যবক্ষেণে রাখা হবে। স্বাভাবিক হলে, জঙ্গলে ছাড়ার কথা ভাবা হবে।’’