Elephant killed Old Man

অস্বস্তিতে বন দফতর, ক্ষোভের মুেখ শাসকদল

ঘটনা হল, বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের বড় অংশই হাতি উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, হাতি-সমস্যা এলাকার ভোট-ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা নেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৭
Share:

বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে মৃতের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

চলতি অর্থবর্ষের অনেকখানি সময় জুড়ে বড়জোড়ার জঙ্গলে ৬২টি হাতি অবস্থান করলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এতদিন এই পরিসংখ্যানই স্বস্তি দিচ্ছিল বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগকে। কিন্তু সোমবার বড়জোড়ার গয়লাবান্দি গ্রামে একটি হাতি এক বৃদ্ধকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মারার সঙ্গে সঙ্গেই বন দফতরের সেই স্বস্তি উধাও হয়ে গেল।

Advertisement

এই ঘটনায় লোকসভা ভোটের মুখে বন দফতরের থেকেও বেশি অস্বস্তিতে পড়তে দেখা গেল তৃণমূলকে। মৃতের গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বড়জোড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান অলক মুখোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের সামনে পড়ে বন কর্তাদের ফোন করে এলাকা থেকে হাতি দ্রুত তাড়াতে না পারলে নিজে ‘পথে নেমে আন্দোলন করার’ হুঁশিয়ারিও দিতে শোনা যায় তাঁকে। বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীদাস মুখোপাধ্যায়কেও বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়ে বন দফতরের সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে। ঠিক সময়ে বন দফতর মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।

ঘটনা হল, বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের বড় অংশই হাতি উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, হাতি-সমস্যা এলাকার ভোট-ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা নেয়। তাই বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হাতি উপদ্রুত এই এলাকাগুলিতে যে কোনও ঘটনায় তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে নামতে দেখা যেত তৃণমূল নেতাদের। রাজ্যে পালাবদলের পরেও হাতির সমস্যা না মেটায় প্রশ্নের মুখে তৃণমূলই।

Advertisement

২০১৬-র বিধানসভা ভোটে বড়জোড়া কেন্দ্র সিপিএম জেতে। তবে ২০১৯-র লোকসভা ভোটে বড়জোড়া বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে যায় বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে অবশ্য এখানে তৃণমূল জিতেছে। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তাই তার আগে হাতি-সমস্যা নিয়ে বিজেপি সুর চড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক জমি ধরে রাখতে সাধারণ মানুষের কাছে বন দফতরের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাদের সরব হতে হচ্ছে বলে দাবি।

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এ দিন বলেন, “হাতি-সমস্যা মিটবেও কী ভাবে? খোদ বনমন্ত্রীই তো জেলে! আমি জেলার বন দফতরকে বলেছিলাম, হাতির সমস্যা মেটাতে পরিকাঠামো গড়ার জন্য কেন্দ্রের সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখতে। সেক্ষেত্রে ওই চিঠিকে হাতিয়ার করে আমি বিশেষ প্যাকেজের দাবি তুলতে পারতাম। কিন্তু তাতে তৃণমূলের রাজনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে সেই কাজ বনকর্তারা করেননি।” সাংসদের আরও দাবি, বছরের পর বছর ধরে হাতির হানায় সাধারণ মানুষের এই মৃত্যু মিছিলের জন্য তৃণমূল সরকারই দায়ী।

সৌমিত্রর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেও এ দিন বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারেননি তৃণমূল বিধায়ক অলক। তিনি বলেন, “সৌমিত্র কোনও দিন এই জঙ্গলের গ্রামে পা রেখেছেন? সাংসদ হিসেবে একজন মানুষেরও পাশে দাঁড়াননি তিনি। তাই ওঁর কথার উত্তর দেওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তাই আমাদের নেই।” বন দফতরের গাফিলতি রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে অলক বলেন, “সাধারণ মানুষ যখন বলছেন গাফিলতি রয়েছে, তার মানে কোথাও নিশ্চয়ই ফাঁক থেকে যাচ্ছে। আমি সাধারণ মানুষের অভিযোগের কথাই বনকর্তাকে ফোনে বলেছি। আমাদের সরকার মৃতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দিচ্ছে। কিন্তু এটা বাস্তব, মানুষটাকে তো আমরা বাঁচিয়ে দিতে পারব না। তাই হাতিগুলি দ্রুত এলাকা থেকে বের করতে তৎপর হওয়ার দাবি তুলেছি।” দফতর জানিয়েছে, সাহারজোড়া জঙ্গলে অনেকখানি এলাকা নিয়ে বৈদ্যুতিক বেড়ার মধ্যে হাতিদের রাখা হয়েছে। ওই জঙ্গলে হাতিরা পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ায় বাইরে উপদ্রব চালাচ্ছে না। কিন্তু ১০টি হাতিকে ওই আনতে হিমশিম খাচ্ছে বন দফতর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement