Destruction of ivory

দশ বছর ধরে জমে থাকা হাতির ৫৭টি দাঁত বিশেষ প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করল বাঁকুড়া বন দফতর

আন্তর্জাতিক ‘সাইটস’ চুক্তি অনুযায়ী, বিপন্ন বন্যপ্রাণীদের দেহাংশ বিক্রি বা ব্যবহার করা যায় না। তা নষ্ট করে ফেলতে হয়। তা মেনেই বাঁকুড়ায় হাতির দাঁত নষ্ট করা হল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৬
Share:

নষ্ট করার আগে হাতির দাঁতগুলি দেখাচ্ছেন বনকর্তারা। — নিজস্ব চিত্র।

হাতির দাঁত খোলাবাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু চোরাকারবারিদের দৌলতে সেই দাঁতই বিকিয়ে যায় লক্ষ লক্ষ টাকায়। এ বার বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া ৫৭টি হাতির দাঁত পুড়িয়ে নষ্ট করে দিল বন দফতর। যাতে উদ্ধার হওয়া দাঁত কোনও ভাবেই হাতবদল হয়ে চোরবাজারে গিয়ে না পড়তে পারে। কড়া নজরদারিতে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় বিশেষ চুল্লিতে মঙ্গলবার নিজেদের সংগ্রহে থাকা হাতির দাঁতগুলি পুড়িয়ে দিল বন দফতর।

Advertisement

প্রতি বছর ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড় থেকে হাতির পাল পশ্চিম মেদিনীপুর হয়ে ঢুকে পড়ে বাঁকুড়ায়। বছরের একটা বড় সময় ধরে বাঁকুড়ার বিভিন্ন জঙ্গলে কাটিয়ে ফের হাতির পাল ফিরে যায় দলমা পাহাড়ে। বাঁকুড়ার জঙ্গলে থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং অন্যান্য কারণে অনেক হাতির মৃত্যু হয়েছে। নিয়ম মেনে ঘটনাস্থলে বা তার আশপাশে হাতির দেহ পুড়িয়ে ফেলে বন দফতর। হাতির দেহ পোড়ানোর জন্য কাঠ দিয়ে যে তাপমাত্রা তৈরি করা সম্ভব তা দিয়ে হাতির দেহের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেলেও পোড়ানোর পর হাতির দাঁত থেকে যায় অবিকৃত। ফলে হাতির দেহ পোড়ানোর পরেও হাতির দাঁতের চোরাচালান হতে পারে, এই আশঙ্কায় দেহ পোড়ানোর আগে কড়া নিরাপত্তায় তার দাঁত কেটে নেওয়া দস্তুর। এ ভাবেই গত প্রায় এক দশক ধরে বাঁকুড়া উত্তর, বাঁকুড়া দক্ষিণ এবং বিষ্ণুপুর বন বিভাগে জমে ছিল হাতির ৫৭টি দাঁত। আন্তর্জাতিক ‘সাইটস’ চুক্তি অনুযায়ী, বিপন্ন বন্যপ্রাণীদের দেহাংশ বিক্রি বা ব্যবহার করা যায় না। তা নষ্ট করে ফেলতে হয়। এ ব্যাপারে ভারতীয় বন্যপ্রাণ আইনেও স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। তা মেনেই বাঁকুড়ায় হাতির দাঁত নষ্ট করা হল।

বৈঠকে স্থির হয়, বড়জোড়ার বিশেষ চুল্লিতে উচ্চ তাপমাত্রায় হাতির দাঁতগুলি নষ্ট করে ফেলা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার কড়া নিরাপত্তা এবং বন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে বড়জোড়ার ওই বিশেষ চুল্লিতে হাতির দাঁত নষ্ট করে ফেলা হয়।

Advertisement

বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘প্রায় দশ বছর ধরে বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করা হাতির এই ৫৭ টি দাঁত বন দফতরের সেফ কাস্টডিতে রাখা ছিল। আইন অনুযায়ী, আমরা আজ তা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিলাম।’’ বিষ্ণুপুর বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, ‘‘অনেক সময় হাতি অসুস্থতা এবং বার্ধক্যের কারণে মারা যায়। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়েও হাতির দাঁত ভেঙে পড়ে। মৃত হাতির দাঁত এবং লড়াইয়ে ভেঙে যাওয়া দাঁত আমরা সংগ্রহ করে রাখি। হাতির এই দাঁত নিয়ে ব্যবসা বা তার ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই যাতে তার কোনও সুযোগ না থাকে, সে জন্যই আইন মেনে হাতির দাঁত নষ্ট করা হচ্ছে।’’ রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন, ‘‘অতীতে উত্তরবঙ্গে এ ভাবে বেশ কিছু হাতির দাঁত নষ্ট করেছিল বন দফতর। দক্ষিণবঙ্গেও যাতে এই প্রক্রিয়া নিয়মিত ভাবে হয় তার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement