বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তরজা। —নিজস্ব চিত্র।
হাতির হানায় আহত তিন ব্যক্তির চিকিৎসা নিয়ে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জোর তরজায় জড়াল বন দফতর। বিষ্ণুপুরের এডিএফও বীরেন কুমার শর্মা চিকিৎসা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহত তিন ব্যক্তির যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। বন দফতরের অভিযোগ উড়িয়ে হাসপাতালের সুপারের পাল্টা দাবি, ‘‘এডিএফও চিকিৎসক নন। তাই তিনি কী ভাবে বুঝলেন যে চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে?’’ চিকিৎসা নিয়ে দুই সরকারি দফতরের টানাপড়েনের মাঝে আহতদের পরিবার চাইছে ভালয় ভালয় তাদের সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিষ্ণুপুর ব্লকের বগডোবা গ্রাম লাগোয়া ফসলের জমিতে ঢুকে পড়ে হাতির দল। হাতি ফসল নষ্ট করছে শুনে মাঠে দৌড়ে যান সুনীল মুর্মু, অনিল হেমব্রম এবং শুকুর আলি মল্লিক নামে তিন আলুচাষি। মাঠ থেকে হাতির দলকে তাড়ানোর সময় তিন জন উল্টে হাতির দলের আক্রমণের মুখে পড়ে যান। শুঁড়ে তুলে তিন জনকে আছড়ে ফেল পা দিয়ে মাড়িয়ে যায় হাতির দল। গুরুতর জখম হন তিন জনই। খবর পেয়ে বন দফতর আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। আপাতত সেখানেই তাঁদের চিকিৎসা চলছে।
কিন্তু, শুক্রবার আহতদের পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আহত তিন ব্যক্তির চিকিৎসা কেমন চলছে, দেখতে যান বনবিভাগের এডিএফও। তার পরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই তিন ব্যক্তি আহত হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে তাঁদের তাঁদের উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তার পর ২০ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের যে চিকিৎসা করা হয়েছে, তা মোটেই সন্তোষজনক নয়। যথাযথ চিকিৎসাই হচ্ছে না। এই হাসপাতালের পক্ষে যথাযথ চিকিৎসা করা সম্ভব না হলে আহতদের অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়ার অনুরোধ করব।’’ এই অভিযোগ শুনে
হাসপাতালের সুপার শুভঙ্কর কয়াল বলেন, ‘‘এডিএফও চিকিৎসক নন। তাই তিনি কী ভাবে বুঝলেন যে আহতদের চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে না? তিনি এসে আমাদের জানাতে পারতেন তো কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা উচিত।’’ তাঁর সংযোজন, আহত তিন জনের সব রকম প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্টও সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানো হচ্ছে।’’
সরকারি এই দুই দফতরের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মাঝে আহত সুনীলের স্ত্রী মালতী মুর্মু বলেন, ‘‘ভর্তির পর শুক্রবার সকালে চিকিৎসক দেখে বলেছিলেন প্লাস্টার করা হবে। তার পর আর প্লাস্টার করার কোনও উদ্যোগ নেননি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্মীরা। পরে জানতে পারি প্লাস্টার হবে না। কেমন চিকিৎসা হচ্ছে তা-ও বুঝতে পারছি না। আমরা চাই, আমাদের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।’’