জ্বলছে কালিপাহাড়। শনিবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র
ফের আগুন পাহাড়ে। এ বারে ঘটনাস্থল রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড় ও সংলগ্ন কালিপাহাড়। শনিবার দুপুর নাগাদ কালিপাহাড়ের উপরের অংশে আগুন জ্বলতে দেখেন স্থানীয়েরা। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দু’ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধে নাগাদ সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পরের দিকে ফের আগুন ছড়িয়ে যায় জয়চণ্ডী পাহাড়ে।
পাহাড়ের নীচেই রয়েছে রঘুনাথপুর শহরের নন্দুয়াড়ার বাগদিপাড়া, বাউরি পাড়া। পাহাড় সংলগ্ন এলাকাতেও বাড়িঘর রয়েছে। স্থানীয়েরা জানান, এ দিন দুপুরে তাঁরা জয়চণ্ডী পাহাড় সংলগ্ন কালিপাহাড়ের একাধিক জায়গায় শুকনো ঘাসে আগুন জ্বলতে দেখেন। খবর দেওয়া হয় থানা ও দমকলকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন, রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দিব্য মুরগেশন, এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়, বিডিও (রঘুনাথপুর ১) আনির্বাণ মণ্ডল। পৌঁছয় দমকলের একটি ইঞ্জিন। দমকলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুন উপর থেকে নীচের দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। কালিপাহাড়ের উপরে যাওয়ার একাধিক গলিপথ থাকলেও সেখান দিয়ে দমকলের গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়নি। ফলে, পাহাড়ের উপরের অংশে হেঁটে গিয়ে দমকল কর্মীদের লাঠি দিয়ে জ্বলন্ত অংশ পিটিয়ে আগুন নেভাতে হয়েছে। পরে অবশ্য আগুন পাশের জয়চণ্ডী পাহাড়েও ছড়ায়। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গল ও বুধবারও জয়চণ্ডী পাহাড় সংলগ্ন অন্য একটি পাহাড়ে আগুন লেগেছিল।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় একাধিক জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। যা চিন্তায় ফেলেছে বন দফতরকে। ইতিমধ্যে পুড়ে গিয়েছে বহু গাছ। বাসাছাড়া হয়েছে বহু পশু ও পাখি। এই অবস্থায় জঙ্গলে আগুন ঠেকাতে যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যদের উপরেই ভরসা রাখছে বন দফতর। গত শুক্রবার থেকে কংসাবতী দক্ষিণ বিভাগের বিভিন্ন বনাঞ্চলে যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যেরা পালা করে জঙ্গলে নজরদারি চালাবেন বলে জানা গিয়েছে।
বন দফতর সূত্রের খবর, প্রত্যেক জঙ্গল এলাকার বন পরিচালন কমিটিতে পাঁচ-ছ’জন সদস্য থাকছেন। সেই সদস্যদের নির্বাচন করে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরাই। গ্রামের প্রতিনিধি সদস্যদের সাহায্য করছেন বন দফতরের আধিকারিক এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত, বিধায়ক অথবা সাংসদের প্রতিনিধিরা। এই ভাবেই তৈরি হচ্ছে এক একটি যৌথ পরিচালন কমিটি।
এ ছাড়া, বন দফতর সূত্রের খবর, গ্রামে-গ্রামে বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এবং মাইকে বলে সচেতনতা প্রচারের কাজ চলছে। প্রচার চালাচ্ছে বন দফতর। গত শুক্রবারও কংসাবতী দক্ষিণ বিভাগের বান্দোয়ান ১, বান্দোয়ান ২, যমুনা বনাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে ও মাইকে করে সচেতনতা প্রচার করা হয়েছে।
বান্দোয়ান ও মানবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে ঘন জঙ্গল। রয়েছে শাল, পিয়াল, মহুল, কেঁদ-সহ বিভিন্ন গাছ। ঘন জঙ্গলে থাকে বনশুয়োর, খরগোশ-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। প্রায়ই দেখা যায় চিতল হরিণ।
জঙ্গলে আগুন লাগা প্রসঙ্গে যমুনা বনাঞ্চলের রেঞ্জ আধিকারিক হীরককুমার সিংহ জানান, অনেক সময় গ্রামের লোকেরা শিকারের জন্য শুকনো পাতায় আগুন ধরিয়ে দেন। গ্রামবাসীরা যাতে এই সব বিষয়ে সচেতন থাকেন, বনকে ভালবাসেন তা নিশ্চিত করতে বন দফতর প্রচার চালাচ্ছে। এর সঙ্গে ঠিক হয়েছে, প্রতি এলাকায় যৌথ পরিচালন কমিটির সদস্যেরা পালা করে তাঁদের গ্রাম সংলগ্ন বনাঞ্চলে নজরদারি চালাবেন। জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে দফতরের আধিকারিকদের খবর দেবেন।
এই ব্যবস্থায় খুশি গ্রামবাসী এবং যৌথ পরিচালন কমিটির সদস্যেরাও। তাঁদের এক জন বিবেকানন্দ মানকি বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকে আমরা টহল শুরু করেছি। বন দফতরের এই ব্যবস্থায় শামিল হতে পেরে ভাল লাগছে।’’ অন্য দিকে, বাঘমুণ্ডির পরে শনিবার থেকে পুরুলিয়া বনবিভাগের ঝালদা বনাঞ্চল এলাকাতেও জোরদার প্রচার শুরু হয়েছে বলে ঝালদা রেঞ্জ সূত্রে জানানো হয়েছে।
এ দিন সকাল থেকেই ঝালদা রেঞ্জ এলাকার খামার, নওয়াগড়, ওনা-সহ বেশ কিছু জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম এলাকায় মাইকে প্রচার করে সাধারণ মানুষজনকে সচেতন করা হয়। ঝালদা রেঞ্জের আধিকারিক অমিয় বিকাশ পাল জানান, এখন থেকে প্রচার নিয়মিত চলবে।’’ এর পাশাপাশি, জঙ্গলে নজরদারিও ইতিমধ্যে বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।