জেলের পথে পাত্র। —নিজস্ব চিত্র।
কনে নার্স। হবু বর কলকাতার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। পাত্রের পরিচিতি সম্পর্কে অন্তত তেমনটাই জানতেন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এমনকি, পাত্রী নিজেও। বিয়ের আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখেনি কনেপক্ষ। বরযাত্রীদের আপ্যায়নও চলছিল সাধ্যমতো। ছাঁদনাতলায় বেশ কিছু আচারের পর সিঁদুরদানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পুরোহিত। তখনই অঘটন। বরের নকল পরিচয় ফাঁস হয়ে গেল কনেপক্ষের কাছে। বিয়েতে বেঁকে বসলেন কনে। কনেপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিঁদুরদানের ঠিক আগেই পাত্রের ঠাঁই হল জেলে। বুধবার রাতে বাঁকুড়ার জয়পুরে এই ঘটনায় শোরগোল এলাকায়। কনেপক্ষের তরফে লিখিত অভিযোগ পেয়ে হবু বরকে গ্রেফতার করে শুক্রবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করল পুলিশ ।
স্থানীয় এবং পুলিশ সূত্রে খবর, জয়পুর থানা এলাকার বাসিন্দা পেশায় নার্স এক তরুণীর সঙ্গে মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে আলাপ হয় মুর্শিদাবাদের খড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বাপি চাঁদপাড়ির। বাপি তরুণীকে জানিয়েছিল তাঁর বাড়ি বীরভূমের রামপুরহাটে। আর নিজেকে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিয়ে তিনি আলাপ জমান। কিছু দিন সমাজমাধ্যমে চুটিয়ে গল্পগুজব হয় দু’জনের। অন্তরঙ্গতা বাড়ে। দু’জনই সম্পর্কের কথা নিজেদের পরিবারের কাছে জানালে শুরু হয় বিয়ের তোড়জোড়।
বুধবার রাতে জনা পঞ্চাশেক বরযাত্রী-সহ কনেপক্ষের বাড়িতে হাজির হন হবু বর। বরযাত্রীদের খাওয়ানোর পাশাপাশি শুরু হয়েছিল বিয়ের অনুষ্ঠানও। নাটকীয় ভাবে সিঁদুরদানের ঠিক আগে এক বরযাত্রীই ফাঁস করে দেন বরের আসল পরিচয়। তাঁর কথাতেই জানা যায়, পাত্র পেশায় চিকিৎসক নন, তিনি দুধবিক্রেতা। শুধু তাই নয়, হবু জামাই যে ঠিকানা এমনকি, বাবা-মায়ের নাম বলেছিলেন, সে সবও ভুয়ো বলে জানতে পারে কনেপক্ষ। বরের আসল পরিচয় ফাঁস হতেই বিয়ের আসরে শুরু হয় হইচই। বিয়েতে বেঁকে বসেন পাত্রী নিজেই। খাওয়া-দাওয়া, বিয়ের আনন্দ মাথায় ওঠে। প্রতারণার অভিযোগে পাত্রকে আটকে রাখেন কনেপক্ষের লোকজন। খাওয়া দাওয়া করিয়ে বরযাত্রীদের অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর রাতভর বরকে আটকে রেখে বৃহস্পতিবার হবু বরকে জয়পুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় কনেপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে কনেপক্ষের তরফে জয়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তার পর বাপি চাঁদপাড়ি নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতকে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে ধৃতকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
এমন একটি ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত কনে এবং তাঁর বাড়ির লোকজন। শুক্রবার পাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এবং আমরা সরল ভাবে বিশ্বাস করেছিলাম ওই যুবককে। কিন্তু সে দিনের পর দিন ভুয়ো পেশা, ভুয়ো ঠিকানা এমনকি বাবা-মায়ের ভুয়ো নাম ব্যবহার করে আমাদের ঠকিয়ে এসেছে। বিয়ের রাতে তাঁর আসল পরিচয় জানতেই আমরা তাঁকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা এই প্রতারকের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি চাই।’’ অন্য দিকে, ধৃত বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে ওকে দেখে ভাল লেগে গিয়েছিল। বুঝেছিলাম চিকিৎসক ছাড়া পছন্দ করবে না। তাই অন্যায় জেনেও এই পথ বেছে নিয়েছিলাম।’’