(বাঁ দিকে) অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। (ডান দিকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বাইরে প্রচণ্ড গরম। শুক্রবার দুপুরে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে হাজির করানো হয়েছে সবে। তার কিছু ক্ষণ আগেই সেখানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল ইডির হাতে ধৃত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। ঢুকে এজলাসের একটি বেঞ্চে গিয়ে বসেন পার্থ। বেঞ্চের অন্য প্রান্তের আর একটি বেঞ্চে বসে অর্পিতা। মাঝখানে ব্যবধান কয়েক ফুট হবে। ঢুকেই দেখা গেল ঘিয়ে-বাদামি স্ট্রাইপের পাঞ্জাবি এবং সাদা পাজামা পার্থ কেমন উসখুস করছেন। বসতে না বসতেই কিছু ক্ষণ পর পর ঝুঁকে বেঞ্চের অন্য প্রান্তে দেখার চেষ্টা করছেন। চোখ সামনের দিকে বেঞ্চে বসা অর্পিতার দিকে। তার পর একা একাই বললেন, ‘‘লাল জামা পরাটা কে?’’ তার পরেও বার কয়েক ওই ভাবেই দেখার চেষ্টা করলেন ‘লাল জামা’ পরিহিতাকে। অন্য দিকে, অর্পিতাও বার দুয়েক তাকিয়েছেন পার্থের দিকে। তার পর অবশ্য অন্যমনস্কই ছিলেন। আবার অর্পিতার পাশেই এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর পরনেও লাল টিশার্ট ছিল।
এজলাসে ঢোকার সময় অর্পিতার পরনে ছিল লাল রঙের কামিজ, সাদা সালোয়ার। গায়ে একটা হালকা হলুদ রঙের ওড়না। হাত এবং পায়ের আঙুলে নেলপলিশ। বেশ পরিপাটি। আদালতে ঢোকার সময় মুখে মাস্ক ছিল। তবে এজলাসে ঢোকার পর মাস্ক খুলে দেন। তা-ও কি পার্থ অর্পিতাকে চিনতে পারেননি? তা জানা যায়নি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার হন পার্থ। ইডির গ্রেফতারির পর রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর ‘ঠিকানা’ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর মন্ত্রিত্ব গিয়েছিল। তৃণমূল তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড ঘোষণা করে। অন্য দিকে, পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ কোটিরও বেশি টাকা পায় ইডি। সেই থেকে গ্রেফতার তিনিও। শুক্রবার আদালতে হাজির করানো হয় নিয়োগ মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা, মানিক ভট্টাচার্য এবং কুন্তল ঘোষকে। প্রিজ়ন ভ্যান থেকে যখন অর্পিতা নামছিলেন, তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এসএসসি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি যে বাতিল হয়ে গেল, এ প্রসঙ্গে তিনি কী বলবেন? অর্পিতার জবাব ছিল, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যাঁদের প্রশ্ন করার তাঁদের করুন।’’ ফের সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, কয়েক হাজার চাকরি যে বাতিল হয়ে গেল, তার দায় কার বলে মনে করেন? তার অবশ্য কোনও জবাব দেননি তিনি। অন্য দিকে, পার্থ মুখ খোলেন কুণাল ঘোষকে নিয়ে। দলীয় পদ থেকে কুণালকে অপসারণ নিয়ে পার্থের দাবি, তিনি যখন বাইরে (জেলের) ছিলেন, তখনই দলকে বার বার বলেছেন যে বিরোধীদের চেয়ে তৃণমূলে থেকে তৃণমূলের বেশি ক্ষতি করছেন কুণাল।