জলদি আলু তোলা চলছে বিষ্ণুপুরের বগডহরায়। নিজস্ব চিত্র
জলদি আলুর ভাল ফলন দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলেন চাষিরা। কিন্তু আলু বাজারে আসতেই দাম নেমে গিয়েছে তলানিতে। চাষিদের আক্ষেপ, এই দরে বিক্রি করে চাষের খরচের অর্ধেক উঠছে। জলদি আলু চাষ করে লোকসানে মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। ব্যবসায়ীদের দাবি, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলি আলু চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করায় সেখানে বাংলার আলুর চাহিদা কমে গিয়েছে।
বাঁকুড়া জেলার বেশির ভাগ আলু উৎপাদন হয় মূলত পাত্রসায়র, ইন্দাস, কোতুলপুর, জয়পুর, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী ও বড়জোড়া ব্লকে। ওই সব এলাকার চাষিদের দাবি, এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ পড়েছে ২৬ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিঘেতে গড়ে ১০০-১১০ বস্তা আলুর ফলন হয়েছে। কিন্তু এখন বস্তা পিছু জলদি আলুর পাইকারি দর যাচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা। অর্থাৎ আলুর দাম কেজিতে নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে তিন টাকায়। ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে সেই আলু বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তার সুফল চাষিরা পাচ্ছেন না।
পাত্রসায়রের আলু চাষি রতন মণ্ডলের দাবি, ‘‘গত বছর আলুর দাম ভালই ছিল। এ বার ধার নিয়ে আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু আলুর দাম যা পড়ে গিয়েছে, তাতে ধার শোধ করা দূরে থাক, খরচের অর্ধেক টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এ ভাবে চললে মাঠ থেকে আর আলু তুলবেন না চাষিরা।
বিষ্ণুপুরের আমডহরা গ্রামের আইজুল খান বলেন, ‘‘জলদি আলুর চাষ থেকে বোরো ধান চাষের খরচ উঠে আসত। এখন যা অবস্থা তাতে আলু চাষের দেনাও শোধ করা যাবে না। খুব সমস্যায় পড়ে গেলাম।’’ কোতুলপুরের এক চাষি জানান, রাসায়নিক সারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে, কৃষি শ্রমিকের খরচও বেড়েছে। শুধু ফসলের দামই কমছে। সরকার এখনই দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নিলে চাষিদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’’
এই অবস্থা কেন?
বাঁকুড়া জেলা কৃষি অধিকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘প্রায় আট থেকে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে জলদি আলুর চাষ হয়েছে। গতবারের তুলনায় এ বার জলদি আলুর ফলন বেড়েছে।’’ বাঁকুড়া জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক মহম্মদ আকবর আলির মতে, পুরনো আলু এখনও বাজারে রয়েছে। তার উপর ভিন্ রাজ্যে এ বার বাংলার আলুর চাহিদা নেই। সেখানেও আলুর চাষ হচ্ছে। সব মিলিয়ে জলদি আলুর দাম কমে গিয়েছে।’’
পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সভাপতি তথা কোতুলপুরের বাসিন্দা বিভাস দে বলেন, ‘‘একে আলুর ফলন বেড়েছে, অন্য দিকে পড়শি রাজ্যে চাহিদা নেই। আশপাশের জেলাতেও বাঁকুড়ার আলুর চাহিদা কম।’’ তাঁর মতে, মার্চ মাসের গোড়ায় হিমঘর খোলার পরে আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারকে আলু কিনতে হবে বলে দাবি করেছেন কৃষকসভার জেলা সম্পাদক যদুনাথ রায়। তিনি দাবি করেন, জ্যোতি আলু বাজারে আসেনি, তাতেই এই অবস্থা! ফলন বেশি হলে সরকারকে সঠিক দামে আলু কিনতে হবে। না হলে চাষি মারা পড়বে। বাম আমলে সরকার স্কুলের মিড-ডে মিলের জন্য, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির জন্য আলু কিনত। যদুনাথ বলেন, ‘‘চাষির কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে প্রায় দ্বিগুণ দামে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবস্থা না নিলে আমরা পথে নামব।’’
তৃণমূলের কিসান ও খেতমজুর সেলের জেলা সভাপতি আশুতোষ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, রাজ্য সরকার চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনে। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর নতুন আলু ওঠার সময় দাম নামে। এ বারও সেটাই হয়েছে। তবে এ বার উত্তরপ্রদেশে আলুর চাষ সে ভাবে হয়নি। কাজেই আলুর দাম বাড়বে।’’