—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে সদ্য বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগে ঢোকা হাতির দলের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল ধানজমির। রবিবার রাতে বেলিয়াতোড় রেঞ্জের বৃন্দাবনপুর বিটের বাঁদরকোঁদা গ্রামের ঘটনা। বন দফতরের দাবি, হাতিদের হানায় বাঁদরকোঁদা সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এলাকাবাসীর যদিও দাবি, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। ঘটনার প্রতিবাদে ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোমবার সকালে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরে পুলিশ ও বনাধিকারিকদের মধ্যস্থতায় অবরোধ ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল ঘোষ, চঞ্চল ঘোষ, বুধন ঘোষেরা জানান, রবিবার বিকেলে হাতিগুলি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে ভিড় জমাতে থাকে। পরে দলের কিছু হাতি জঙ্গল লাগোয়া চাষের জমিতে নেমে পায়ে মাড়িয়ে, শুঁড়ে তুলে নষ্ট করে ধান। দুলাল, চঞ্চলদের দাবি, “এ বারে এমনিতেই বৃষ্টি ভাল হয়নি। টাকা খরচ করে সেচের জল নিয়ে চাষ করেছিলাম। প্রচুর খরচ হয়েছে। তার উপরে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় ধান বাঁচানোই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যেটুকু বেঁচেছিল, হাতির হানায় তা-ও গেল।” তাঁদের আরও অভিযোগ, “আগেও হাতির হানায় ফসল নষ্ট হয়েছে। তার ক্ষতিপূরণ অনেকে পাননি। আর যাঁরা পেয়েছেন, তাতে চাষের খরচও ওঠেনি। ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্ক এ বারে বাড়ানো হোক।”
এ দিন ওই গ্রামে যান ‘হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত সংগ্রামী গণমঞ্চ’-এর সদস্যেরা। সংগঠনের সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, “বছর বছর হাতির হানায় এ ভাবে ক্ষয়ক্ষতি মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আমরা বহু বার এর স্থায়ী সমাধানের দাবি তুলেছি। বন দফতর আর কবে সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ নেবে!” তাঁর দাবি, অবিলম্বে হাতিগুলিকে এলাকা থেকে সরিয়ে সাধারণ মানুষ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি রুখতে ব্যবস্থা নিক বন দফতর।
দিন কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ২৫টি হাতির দলটি ঢোকে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগে। বন দফতর সূত্রে জানা যায়, এ মুহূর্তে একাধিক দলের প্রায় ৬৯টি হাতি বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের জঙ্গলে রয়েছে। বনকর্মীদের একাংশ জানান, সদ্য জেলায় ঢোকা দলটির হাতিগুলি বেশ আক্রমণাত্মক। হুলাকর্মীদের দিকে প্রায়ই তেড়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জীবনহানি রোখাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) উমর ইমাম বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারি নিয়মমতো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। হাতিগুলি যাতে কোনও ভাবে জনবহুল এলাকায় না ঢুকে পড়ে, তার জন্য হুলাপার্টির সদস্যেরা কড়া নজর রেখেছেন। কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা রুখতে আমরা সব রকম ভাবে সতর্কতা নিচ্ছি।”