বৃষ্টির নেই বাঁকুড়া জেলায়। এ বারে বর্ষার মরসুমে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার বৃদ্ধি চিন্তা বাড়াচ্ছে। — ফাইল চিত্র।
খাতায়-কলমে আষাঢ়ের শেষ। তবে বৃষ্টির সে ভাবে দেখা নেই বাঁকুড়া জেলায়। সেচের সুবিধাও মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে চাষে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কিত কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। আগামী দিনে এর কুপ্রভাবে পানীয় জলের জোগানে টান পড়ার ভয় বাড়ছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, বাঁকুড়া জেলায় বোরো চাষে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার হয়। তবে এ বারে বর্ষার মরসুমে ভৌমজলের ব্যবহার বৃদ্ধি চিন্তা বাড়াচ্ছে। বিষ্ণুপুর মহকুমার সোনামুখী, পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, জয়পুরে জলদি আলুর চাষ বেশি হয়। বর্ষার ধান সময়ে তুলতে না পারলে সেই আলু চাষ করা সমস্যার। তাই ভূগর্ভস্থ জলে বর্ষার ধান চাষ শুরু করেছেন বলে জানান চাষিদের বড় অংশ। সোনামুখীর নিতাই গঁরাই, নিত্যানন্দ দেবনাথদের কথায়, “কার্তিকে খাস ধান চাষে সময় বেশি লাগে। আর সময় নেই। এখন ধান লাগাতে না পারলে জলদি আলু চাষ করা যাবে না।” বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ গ্রামের আব্দুল সত্তার, মড়ার গ্রামের কুতুবুদ্দিন খানেরাও জানান, পুরো মরসুম দু’হাজার টাকার চুক্তিতে জল কিনেছেন। তাতে ধানে লাভ কমবে। জলদি আলু যথেষ্ট অর্থকরী। সময়ে বর্ষার ধান তুলতে না পারলে আর আলুর চাষ হবে না।
একে বৃষ্টির অভাব, অন্য দিকে সেচের সুবিধা না মেলায় বাধ্য হয়েই মাটি থেকে জল তুলতে হচ্ছে বলে জানান পাত্রসায়রের এক চাষি উৎপল ঘোষও। তিনি বলেন, “দামোদর, দ্বারকেশ্বরে জল সে ভাবে নেই। নদীর ধারের জমিতেও সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।এ দিকে বীজের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করছেন।” সমস্যা মানছেন বিষ্ণুপুর মহকুমার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ) রতন মুর্মু। তিনি বলেন, “কৃষকেরা বৃষ্টি হবে ভেবে আগেই বীজতলা তৈরি করেছিলেন। বীজের বয়স বেশি হয়ে গেলে ফলন কমে যাবে। সে কারণে তারা ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার করেছেন।” তিনিও জানান, চাষিদের লক্ষ্য আসলে জলদি আলুর চাষ। ধান দেরিতে উঠলে জলদি আলু চাষ করা যাবে না। তাই ভূগর্ভস্থ জলেই ধান চাষ করা হচ্ছে।
এই প্রবণতা অত্যন্ত বিপজ্জনক জানিয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, এমন চলতে থাকলে আগামী দিনে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট তৈরি হতে পারে। এখন বর্ষার বৃষ্টি একটু পরের দিকে হয়। তবে তাতে ধান চাষে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। চাষিরা জলদি আলু চাষের তাড়ায় তাড়াতাড়ি ধান ফলিয়ে ঘরে তুলতে চান। তাতেই সমস্যা বাড়ছে। পাত্রসায়রের ভূগোলের শিক্ষক বিধানচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “ভূগর্ভস্থ জলের সব চেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কৃষিতে। তা ছাড়া, ভৌমজলের ঘাটতি পূরণ সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাঁকুড়ার মতো ফি বছর পানীয় জলের সমস্যায় ভোগা জেলার ক্ষেত্রে তাই ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার নিয়ে আরও সজাগ হওয়া দরকার। চাষিদের সচেতন করতে হবে।