যুদ্ধের দেশে আটকে দুই ডাক্তারি পড়ুয়া, উদ্বেগে পরিবার
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: ‘সবাই় আটকে বাঙ্কারে, চার্জও শেষ হয়ে যাবে’

এ দিন ফোনে মিসবাউদ্দিন জানালেন, তিনি হস্টেলের বেসমেন্টে খুব কষ্টের মধ্যে আছেন। শুকনো খাবার প্রায় শেষের পথে।

Advertisement

তন্ময় দত্ত 

নলহাটি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৫
Share:

মায়ের সঙ্গে মিসবাউদ্দিন।

দ্বিতীয় দিনে পড়ল রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই চরম উৎকন্ঠায় নলহাটি থানার উত্তর রামপুর গ্রামের ডাক্তারি পড়ুয়া মিসবাউদ্দিন শেখের পরিবার। কারণ, তাঁর জানতে পেরেছেন, ছেলে এখন দিন কাটাচ্ছেন হস্টেলের বেসমেন্টে। সেখানে জল, খাদ্য ও অর্থে টান পড়ছে।

Advertisement

সাধারণ পরিবারের ছেলে মিসবাউদ্দিন। বাবা মহম্মদ সালাউদ্দিনের চার বিঘে জমি চাষ করে যা উপার্জন হয় তাতেই সংসার চলে। মিসবাইদ্দিনের তিন ভাই গ্রামেই থাকেন। তবে, ছোট থেকেই মিসবাউদ্দিন ভাল পড়াশোনায়। খড়গপুর আলামিন মিশনে পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিকে ফাল ফল করার পরে বছর পাঁচেক আগে কিভ শহরে ডাক্তারি পড়তে যান মিসবাউদ্দিন। রাজ্য সরকারের থেকে অর্থঋণ নিয়ে তাঁকে ডাক্তারি পড়াশোনা করাচ্ছেন পরিবার।

মাস তিনেক পরে পরীক্ষা শেষ হলেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হত মিসবাউদ্দিনের। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। আটমকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আটকে যাওয়ায় বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন। গ্রামের বাড়িতে অভিভাবকদের আবেদন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পড়ুয়াদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক অবিলম্বে।

Advertisement

এ দিন ফোনে মিসবাউদ্দিন জানালেন, তিনি হস্টেলের বেসমেন্টে খুব কষ্টের মধ্যে আছেন। শুকনো খাবার প্রায় শেষের পথে। এটিএমএ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনিও কিভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। চেনেন সিউড়ির শাহরুখকে। মিসবাউদ্দিন বললেন, ‘‘রাজ্যের একশোরও বেশি পড়ুয়া আটকে পড়েছি। ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ, সড়ক পথে হাজার কিলোমিটারের মধ্যে হাঙ্গেরিতে আমাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করলে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে পারব।’’ তিনি জানান, যে জায়গায় তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন, তার কিছুটা দূরেই বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। ‘‘খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বেরোলেই ফের সাইরেনের আওয়াজ পেয়ে ছুটে বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ছাত্রদের উদ্ধার না করলে দু’দিন পরে কোনও খাবার পাওয়া যাবে না। তখন কী হবে, ভেবেই আমরা কাঁটা হয়ে আছি!’’—মিসবাউদ্দিনের গলায় আতঙ্কের সুর।

গ্রামের বাড়িতে বসে বাবা সালাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘এ দিন দুপুরে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।’’ চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘ভাবছিলাম চিকিৎসক হয়ে দেশে ফিরে প্রতিষ্ঠিত হবে। সব কেমন হয়ে গেল!’’ অন্য দিকে, মিসবাউদ্দিনের আশঙ্কা, যে কোনও সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে গেলে যোগাযোগ করা যাবে না পরিবারের সঙ্গে, এখন এটাই আতঙ্ক ওই ডাক্তারি পড়ুয়ার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement