আব্দুল করিম মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।
চিকিৎসায় কাজ হচ্ছিল না বলে চিকিৎসকের নামে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক রোগী। সেই অভিযোগ পেয়ে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর সিউড়ি শাখা বিষয়টি খতিয়ে দেখতেই প্রকাশ্যে এল, ওই চিকিৎসক আদতে ভুয়ো। দিনের পর দিন তিনি মিথ্যা পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আইএমএ যদিও আব্দুল কবীর মল্লিক নামের ওই ব্যক্তির কাছ থেকে একটি মুচলেখা নিয়ে তাঁকে এমন কাজ করতে বারণ করেছে। কিন্তু পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
আইএমএ-র সদস্য চিকিৎসক দেবাশিস দেবাংশি জানিয়েছেন, সিউড়িতে বেশ কিছু দিন ধরেই চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগী দেখছিলেন আব্দুল কবীর মল্লিক। ভাল রোগীও হচ্ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু এক রোগী আইএমএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দিন ধরে ওই চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খেয়েও তাঁর রোগ সারছে না। প্রেসক্রিপশনও দেখান তিনি। লিখিত অভিযোগও করেন আইএমএ-র কাছে।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার আব্দুলের চেম্বারে পৌঁছন আইএমএ-র তিন প্রতিনিধি চিকিৎসক দেবাশিস দেবাংশি, অরণ্য দত্ত এবং প্রসূন দাস। ওই ‘চিকিৎসকের’ কাছে তাঁরা জানতে চান, তিনি কোথা থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন? প্রেসক্রিপশনে কেন রেজিস্ট্রেশন নম্বরের উল্লেখ নেই? এমন সব প্রশ্নের মুখে আব্দুল তাঁর অপরাধ স্বীকার করে নেন বলে ওই চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের দাবি। এর পর তাঁর কাছ থেকে একটি মুচলেখা নেওয়া হয় আইএমএ-র তরফে। দেবাশিস দেবাংশির কথায়, ‘‘আমরা এক রোগীর অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি জানতে পারি। ওই ব্যক্তি যে ভাবে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে কাজ করছিলেন, তা একেবারেই ভুল। সে কারণেই আমরা ওঁর কাছ থেকে মুচলেখা নিয়েছি।’’ তিনি আরও জানান, অনেক ওষুধের দোকানই চিকিৎসকদের বসার ব্যবস্থা করে। কিন্তু তার আগে ওই ব্যবসায়ীদের উচিত চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর খতিয়ে দেখা।
যে ওষুধের দোকানে আব্দুল ‘প্রাকটিস’ করতেন, তার মালিক সত্যব্রত মিত্র নিজের গাফিলতির কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই ব্যবসায় একেবারেই নতুন। বিষয়টি জানতাম না। এমনটা যে হতে পারে, ভাবতেও পারিনি। ওই ব্যক্তি আমার দোকানে জেনারেল ফিজিশিয়ান এবং স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করতেন৷’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে লোকাল ট্রেন চালু হলেও ব্রাত্য কয়েকটি লাইন, বাড়ছে ক্ষোভ
আরও পড়ুন: রায়না-খণ্ডঘোষে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, বাজেয়াপ্ত প্রচুর বাজি
কিন্তু এমন একটা অপরাধের পর কেন আব্দুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হল না? কেনই বা করা হল না কোনও অভিযোগ? পুলিশকে না জানিয়ে কেন শুধু মুচলেখা দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হল আব্দুলকে? এ সব প্রশ্নের জবাবে দেবাশিস কিছু বলতে চাননি। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’’