রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবির প্রদর্শনী শুরু হল। বিশ্বভারতীর কলাভবনের নন্দন আর্ট গ্যালারিতে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
‘আমার জীবযাত্রাপথের শেষ প্রান্তে যখন আলো ম্লান হয়ে এসেছে তখন ইচ্ছা করে ছবি এঁকে সময় নষ্ট করি।’ ৫ জুলাই, ১৯৩৪ সালে হেমন্তবালা দেবীকে চিঠিতে এ কথা জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই ‘সময় নষ্টের ফসলের’ এক ঝলক নিয়ে শুক্রবার বিশ্বভারতীর কলাভবনের নন্দন আর্ট গ্যালারিতে শুরু হল প্রদর্শনী। উদ্বোধন করলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয়কুমার সরেন। উপস্থিত ছিলেন কলাভবনের অধ্যক্ষ সঞ্জয়কুমার মল্লিক, বিশ্বভারতীর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেলের কো-অর্ডিনেটর সাথী গঙ্গোপাধ্যায়, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, আধিকারিক ও ছাত্রছাত্রীরা।
পাণ্ডুলিপির পাতায় কাটাকুটি ও আঁকিবুকি থেকে যা শুরু হয়েছিল তা শেষ বয়সে রবীন্দ্রনাথকে টেনে নিয়ে যায় ছবি আঁকায়। কখনও বিমূর্ত অবয়ব, কখনও নারীর মুখ থেকে কখনও নিসর্গ— তাঁর ছবিতে স্থান পেয়েছে অনেক কিছুই। এক সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এমনই ৭৮টি ছবি দেখার সুযোগ করে দিল বিশ্বভারতী। কাজগুলি বেছে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন কলাভবনের প্রাক্তন শিক্ষক ও শিল্প ইতিহাস বিশেষজ্ঞ আর শিবকুমার। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে। সবার জন্য সকাল সাড়ে দশটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ও দুপুর আড়াইটে থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। ছবিগুলির প্রতি নজর রাখতে নন্দন আর্ট গ্যালারিতে বসানো হয়েছে নজর-ক্যামেরাও।
কাগজ ছাড়া বাঁশের টুকরো ও সেরামিকের উপরে করা রবীন্দ্রনাথের কাজও রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। এর মধ্যে সেরামিকের পাত্রের উপরে নকশার কাজটি দুর্লভ বলে মনে করেন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞেরা। খড়দহে বসে ১৯৩২ সালে কাজটি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সে বছরই কলকাতা আর্ট কলেজে এটি প্রদর্শন করা হয়। পরে আর এটি সর্বসাধারণের সামনে আনা হয়নি। কলাভবনের প্রাক্তন কিউরেটর সুশোভন অধিকারী বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ ছবিগুলি এক প্রকারে বিরল ছবি। এগুলি আগে তেমন ভাবে প্রদর্শিত হয়নি। ছাত্রছাত্রী এবং দর্শকেরা রবীন্দ্রনাথের এতগুলি ছবি একসঙ্গে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।’’
প্রদর্শনী উদ্বোধনের পরে উপাচার্য বলেন, “এমন ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে সত্যিই আজ বড় ভাল লাগছে। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, শিল্পী ও বহু মানুষজন এই প্রদর্শনী সাথী গঙ্গোপাধ্যায়, কলাভবনের শিক্ষক শিশির সাহানা জানান, রবীন্দ্রনাথের আঁকা এই সমস্ত ছবি পড়ুয়াদের জানার জায়গাটা অনেকটা প্রসারিত করবে।