প্রতীকী ছবি।
করোনা পরিস্থিতির কারণে দশম শ্রেণির পাশাপাশি বাতিল হয়েছে আইএসসি ও সিবিএসই বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে নানা মহলে। সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ দিন ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। সেই কমিটিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। এমন আবহে উৎকণ্ঠায় জেলার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও। কী হলে কী হবে, এই নিয়ে জেলায় চলছে নানা মতের চর্চা।
বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে অর্ঘ্য চৌধুরী। অর্ঘ্য বলছে, ‘‘আমি কিছু দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার মতো অনেকের এমন হয়েছে। তার মাঝে পরীক্ষা, প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তায় আছি।’’ অর্ঘ্যর বাবা অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “ছেলে স্কুলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হবে না কে বলতে পারে। আমার তাই মনে হয় এই অতিমারি অবস্থায় পরীক্ষা বাতিল করে মূল্যায়নের অন্য কোনও পথ নেওয়া উচিত।’’
তবে পরীক্ষা না হলে কী হবে সেটাও ভাবনায় রাখছে অনেককে। বোলপুর গার্লস হাইস্কুলের এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আফরিন সুলতানা বলেন, “পরীক্ষা হবে কি হবে না, এই নিয়ে দোলাচলের মধ্যে রয়েছি। পরীক্ষা না হলে মূল্যায়ন কী ভাবে করা হবে সেই নিয়ে চিন্তায় আছি। কেননা নম্বর কমলে কলেজে ভর্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে।” বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় সাধুর মতে, ‘‘পরীক্ষার্থীরা যে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, তাদের উদ্বেগ দূর করতে দ্রুত কোনও সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন।”
একই রকম উদ্বেগের ছবি দেখা গিয়েছে জেলা সদর সিউড়িতেও। সিউড়ি বেণীমাধব ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়া দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া অরিত্র মেহেরার কথায়, ‘‘জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষা হওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু এই ভাবে আদৌও হবে কি হবে না, এই দোটানায় বেশি সমস্যা হচ্ছে৷ পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতে সমস্যা হচ্ছে।’’ সিউড়ির বাসিন্দা, অরিত্রর বাবা শ্যামল মেহেরা বলেন, ‘‘পরীক্ষা না হলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যাবে। তাই আমার মনে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা করাতে পারলে পড়ুয়াদের অনেক উপকার হবে।’’
পরীক্ষা হোক, চান শিক্ষকেরাও। সিউড়ি চন্দ্রগতি স্কুলের শিক্ষক সন্দীপন রায় বলেন, ‘‘শিক্ষক হিসেবে চাইব যে কোনও উপায়ে পরীক্ষা হোক। কারণ পরীক্ষা হল পড়ুয়ার নিজের যোগ্যতা মূল্যয়ানের একটি মাপকাঠি। তবে এই অতিমারির পরিস্থিতিতে পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া সম্ভব সেই নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে।’’ সিউড়ি বেণীমাধব ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষক হিসেবে সব সময় চাইব পরীক্ষা হোক। পরীক্ষার মাধ্যমে পড়ুয়ারা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হোক। তবে এই অতিমারি আমরা কখনও দেখিনি। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিষয়টি খুবই দরকার। তাই পরীক্ষার ভবিষ্যৎ সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।’’