ধানক্ষেতে দলছুট হাতির হানা। — নিজস্ব চিত্র।
জমি থেকে ধান আনতে গিয়েছিলেন। ধানের আঁটি বাঁধার কাজে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, টেরই পাননি কখন নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে গজরাজ। টের পেতেই টেনে দৌড়! কিন্তু আলে পা লেগে পপাত ধরণীতলে। তত ক্ষণে হাতি আবার এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। কোনও ক্রমে প্রাণ বেঁচেছে ঠিকই কিন্তু শরীরে চোট লেগেছে বিস্তর। আর সাক্ষাৎ মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখে মনের চোটও কমও নয়। ঘটনা বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় রেঞ্জের নিত্যানন্দপুর গ্রামের।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামের আর পাঁচ জনের মতোই স্থানীয় লাদুনিয়ার জঙ্গলের পাশে বরাবর ধান জমি রয়েছে নিত্যানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা অনুপ ঘোষের। সেই জমির ধান কাটার পর শুক্রবার তা খামারে নিয়ে আসার কথা ছিল। তাই সাতসকালে জমিতে গিয়ে ধানের আঁটি বাঁধার কাজ করছিলেন অনুপ। হঠাৎই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে সোজা অনুপের কাছে চলে আসে একটি দলছুট দাঁতাল। সেটিকে দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনুপ। পিছন পিছন তাড়া করে দাঁতালটিও। কিছুটা যাওয়ার পরই অনুপ মাটিতে পড়ে গেলে হাতিটি তাঁকে ধরে ফেলে। এর পর তাঁর পা মাড়িয়ে দিয়ে হাতিটি ফের জঙ্গলে ফিরে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে আহত অনুপকে উদ্ধার করে বেলিয়াতোড় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান বনকর্মীরা। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করানো হয় বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অনুপের পা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাতির হানায় আহত অনুপ বলেন, ‘‘ধানক্ষেতে হাতিটি আমার উপর হামলা করে। আমি পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে পড়ে যাই। তখন হাতিটি আমায় ধরে ফেলে। আমার পায়ের উপর সে একটি পা তুলে দেয়। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠেছিলাম। তার পর আর মনে নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘দিনের পর দিন আমাদের এলাকায় হাতিটি রয়ে গিয়েছে। ফসল নষ্টের পাশাপাশি একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে হাতিটির জন্য। কিন্তু বন দফতর নির্বিকার। অবিলম্বে হাতিটিকে অন্যত্র তাড়ানোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’ বন দফতরের বেলিয়াতোড় রেঞ্জের আধিকারিক মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘লাদুনিয়ার জঙ্গলে এখন একটি হাতিই রয়েছে। হাতিটি দলের সঙ্গে সাধারণত থাকতে চায় না। একা একাই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। হাতিটির গতিবিধির উপর আমাদের নজর রয়েছে। আহত ব্যক্তির সমস্ত রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’