কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে ডিভিসি-র দেওয়া চিঠি। নিজস্ব চিত্র।
আট বছর আগে দায়িত্বে পেলেও কয়লা খনির কাজ শুরু করা যায়নি। অবশেষে দুবরাজপুরের লোবায়, প্রস্তাবিত খাগড়া-জয়দেব কয়লা খনি প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়াল ডিভিসি বা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন। ডিভিসি সূত্রে খবর, দিন তিনেক আগেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন ওই প্রকল্পের দায়িত্ব থাকা চিফ ইঞ্জিনিয়ার ২ (মাইনিং) জাগেশ কুমার মান্ডেয়।
এলাকায় এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই হতাশ লোবার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, তাঁরা কখনওই খনির বিপক্ষে ছিলেন না। শুধু দাবি ছিল ভিটেমাটি ছাড়ার জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পু্নর্বাসন প্যাকেজের। মাস খানেক আগে এই মর্মে একটি গণস্বাক্ষরিত চিঠিও মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা পাঠিয়েছেন। লোবা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা ভীষণ হতাশ।’’ খনি হলে গোটা এলাকার উন্নয়ন হতে পারত। ডিভিসি-র সিদ্ধান্তে তা ধাক্কা খেল বলেই দাবি এলাকাবাসীর।
এভাবে সরে যেতে হওয়ার জন্য অবশ্য পরোক্ষে সরকার ও প্রশাসনের মনোভাবকে দায়ী করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিভিসির এক কর্তা। তিনি বলছেন, ‘‘মহম্মদবাজারের ডেউচা-পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লা খনির জন্য সরকার পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ঘোষণা করার পরেই গত ডিসেম্বরে লোবা কয়লা খনির জন্য প্রায় সমমানের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ জমা দিয়েছিল ডিভিসি। কিন্তু, জেলা প্রশাসনের থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি।’’ প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বক্তব্য, ডিভিসি-র দেওয়া প্যাকেজ ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে পাঠানো হয়েছিল।
ডিভিসির সূত্রে খবর, পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে গত ২৩ জুলাই রাজ্যকে চিঠি দিয়ে খনি গড়ার কাজ তরান্বিত করার আর্জি জানিয়ে একটি বৈঠকের সময় চেয়েছিলেন ডিভিসি-র এক কর্তা। সে চিঠির জবাব মেলেনি বলেই ডিভিসি সূত্রের দাবি। এ ভাবে ‘ঝুলে’ না থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত একটি সিদ্ধান্ত মেনে খনি গড়ার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।
কী সেই সিদ্ধান্ত?
নানা কারণে দীর্ঘদিন কয়লা খনি গড়ার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি, এমন সরকারি সংস্থাগুলিকে কোনও জরিমানা ছাড়াই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে মে মাসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৩টি চুক্তিবদ্ধ সরকারি কোম্পানির মধ্যে ৪৫টি ‘নন অপারেশনাল’ হয়ে ছিল বিভিন্ন কারণে। সেই তালিকায় ছিল লোবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিভিসি-ও।
এক দশকেরও বেশি সময় থেকে লোবায় খনি গড়ার চেষ্টা চলছে। অতীতে যৌথ ভাবে দায়িত্ব পেয়েছিলে ডিভিসি এবং এমটা। কিন্তু প্রায় ৭০০ একর জমি কিনলেও সে কাজ এগোয়নি (পরে সেই জমি খাস হয়ে যায়)। জমি কেনার পদ্ধতি ঘিরে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আন্দোলনের জেরে ২০১২ সালে থমকে যায় প্রস্তাবিত কয়লাখনি গড়ার কাজ। ২০১৪ সালে কোল ব্লক বাতিলের পরে একক ভাবে খনি গড়ার দায়িত্ব পায় ডিভিসি। কিন্তু, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
ডিভিসি সূত্রের খবর, জরিমানা এড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কাছে খনির কাজ থেকে অব্যাহতি বা ‘সারেন্ডার’ করার শেষ সুযোগ ছিল ৮ অগস্ট। তার পাঁচ দিন আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল ডিভিসি।