বৃষ্টির আশঙ্কায় ত্রিপলে ঢাকা আলু। বিষ্ণুপুরের গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চিন্তায় চাষিরা। গত দু’তিন দিন ধরে সকাল থেকে বাঁকুড়ার আকাশ মেঘলা। তাতে বিশেষত আনাজে পোকার আক্রমণের আশঙ্কায় প্রতিষেধকের খোঁজে অনেকেই ভিড় করছেন দোকানে দোকানে। এই পরিস্থিতিতে তবে অযথা সার-কীটনাশকে খরচ না করে স্থানীয় কৃষি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষিকর্তারা।
আকাশ মেঘলা হতে সব চেয়ে বেশি চিন্তায় পড়েছেন আনাজ চাষিরা। সোনামুখীর তেলরুই গ্রামের নিত্যানন্দ দেবনাথ, নিতাই গরাঁইয়েরা জানান, এই ধরনের আবহাওয়ায় মাচার শসার খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। ফলনের মুখে রয়েছে শসা। বৈশাখের গাজনকে লক্ষ্য করে যা চাষ করা হয়। তাঁদের কথায়, “এই গরম-ঠান্ডা আবহাওয়ায় শসা গাছে পোকা লাগছে। ধসা রোগ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে পুরো গাছটাই মরে যাবে।”
চিন্তায় রয়েছেন ঝিঙে, পটলের মতো আনাজ চাষিরাও। বিষ্ণুপুরের জনতা গ্রামের ভৈরব দাসের আশঙ্কা, “এই ধরনের ভ্যাপসা আবহাওয়ায় ঝিঙের জালি লাল হয়ে যাচ্ছে। অন্য বছরে এই সময়ে ঝিঙের পাইকারি দর থাকে প্রতি কেজি কুড়ি-পঁচিশ টাকা। এ বছরে তা তেরো টাকা প্রতি কেজি চলছে। বৃষ্টি হলে আরও কম দামে বিক্রি করতে হতে পারে।” এই সময় বেশি বৃষ্টি হলে জল দাঁড়িয়ে পাট শাকেরও ক্ষতি হতে পারে, জানান পাত্রসায়রের চাষি রবি সরকার।
কোতুলপুর নীলমোড়ে চাষি বিকাশ রায় আবার জানান, অনেকে দেরিতে আলু লাগিয়েছিলেন। সেই আলু এখনও ওঠেনি। বৃষ্টিতে জল দাঁড়ালে আলুচাষে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এ দিকে, অনেকের আলু তোলার পরে মাঠেই তা পড়ে রয়েছে। শিলাবৃষ্টি হলে আলুতে দাগ আসবে। আলু নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
উল্টো দিকে, এখন বৃষ্টি হলে লাভ হবে বলে মনে করছেন বোরো চাষিরা। বড়জোড়ার বোরো চাষি উৎপল ঘোষ বলেন, “এখন বৃষ্টি হলে চাষে সেচের খরচ কমবে। তিল চাষের পক্ষেও লাভজনক হবে এই বৃষ্টি।” বিষ্ণুপুর মহকুমার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সুব্রত কর্মকারের তবে পরামর্শ, সব চাষেই নিকাশি ভাল রাখতে হবে। মাঠে ফসল থাকলে ত্রিপল বা খড় দিয়ে ঢেকে রাখা দরকার। সব সময় ফসল পর্যবেক্ষণও করতে হবে। আর যে কোনও প্রতিষেধক প্রয়োগের আগে স্থানীয় কৃষি দফতরের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময়ই অযথা বেশি খরচ করেও লাভ কিছু হয় না।