নতুন: সেজে উঠেছে কটেজ। নিজস্ব চিত্র
দুয়ার খুলছে দুয়ারসিনি। আবার। সম্ভব হলে পুজোর আগেই।
এক কালে জয়চণ্ডী পাহাড় বা পঞ্চকোটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পর্যটকদের টেনে আনত পুরুলিয়ার এই পর্যটনকেন্দ্র। এক পাশে আকাশ ছুঁয়ে রাইকা পাহা়ড়। অন্য দিকে, লাগোয়া জঙ্গলে সাত বার পাক খেয়ে বয়ে চলা সাতগুড়ুম নদী। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, ২০০১-এর ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গলের মধ্যে বন উন্নয়ন নিগম তিনটি কটেজ বানিয়ে ‘দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র’ নাম দিয়ে পথ চলা শুরু করে।
গালুডি, ঘাটশিলা বা পুরুলিয়া থেকে বাসে বান্দোয়ান। বান্দোয়ান বাজার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে দুয়ারিসিনি। কটেজের সিঁড়িতে বসলেই কানে আসবে ঝিরঝির করে বয়ে চলা সাতগুড়ুমের শব্দ। সামনের পাহাড়ে গাছের রংবাহার। অনেকে বলতেন, ‘উত্তরবঙ্গে ডুয়ার্স আছে। জঙ্গলমহলের অলঙ্কার দুয়ারসিনি’। তাল কাটল মাওবাদীদের উপদ্রবে জঙ্গলমহল জ্বলে উঠতে।
২০০৩-এর অক্টোবরে দুয়ারসিনির কাছে জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর পোঁতা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় বান্দোয়ান থানার ওসি নীলমাধব দাসের। দুয়ারসিনির পথে ভোমরাগোড়া গ্রামে ২০০৫-এ প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি রবি করকে সস্ত্রীক পুড়িয়ে মারে মাওবাদীরা। কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা হয় ২০০৬-এর মার্চে। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুয়ারসিনি হাটের কাছে পঞ্চায়েত সমিতির নির্মীয়মাণ অতিথিনিবাস ‘উমুল’। সেই ইস্তক ওই তল্লাটে ঘেঁষতেন না পর্যটকেরা। দুয়ারসিনির কটেজগুলির আলো, আসবাব কিছু দিনের মধ্যেই চুরি হয়ে যায়। তার পর থেকে দীর্ঘদিন বন উন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটে ‘অনলাইন’-এ বুক করতে গেলে দুয়ারসিনির কটেজগুলিতে ‘কাজ চলছে’ (আন্ডার মেনটেন্যান্স) বলে দেখা যেত। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কাজ কিছু হতো না। পড়ে নষ্ট হচ্ছিল সরকারি সম্পত্তি।
২০১১-য় রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পরে থামে মাওবাদী উৎপাত। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ থেকে দুয়ারিসিনির তিনটি কটেজ নতুন করে গড়ে তোলার জন্য ৪৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন কটেজ নির্মাণ শুরু হয়েছে। ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। সীমানা পাঁচিল দেওয়া হবে। আশা করছি, পুজোর আগে দুয়ার খুলবে দুয়ারিসিনি।’’
সহ প্রতিবেদন: প্রশান্ত পাল