দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণকেন্দ্র। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।
রাজ্যে ক্ষমতায় পালাবদলের পরে মাওবাদী-আতঙ্ক কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছিল দুয়ারসিনি পর্যটনকেন্দ্র। কয়েক বছর কাটতে না কাটতেই করোনা-হানায় ফের বেসামাল হয় পর্যটন শিল্প। মহামারির চোখরাঙানি কমতেই সেখানে ফিরেছে পর্যটকদের চেনা কোলাহল। এ বার পুজোতেও বহু পর্যটক এসেছেন। পর্যটনকেন্দ্র থেকে আয়ের মুখ দেখায় উৎসাহিত যৌথ বনপরিচালন কমিটিও।
গত দু’বছরে দুয়ারসিনি পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে বলে দাবি বন দফতরের। লভ্যাংশ হিসেবে দু’বছরে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আয় করেছে যৌথ পরিচালন কমিটি। সামনের পর্যটন মুরসুমে দুয়ারসিনিকে ঘিরে বিপুল আয়ের আশা করছেন কমিটির সদস্যেরা।
ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণকেন্দ্র থেকে আয় বাড়ছে। যৌথ বনপরিচালন কমিটির সদস্যেরা লাভের মুখ দেখছেন, স্বর্নিভর হচ্ছেন। এ বার দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজোর সময়ের মধ্যেই এক লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র ঘিরে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’’
বন দফতরের সহযোগিতায় দুয়ারসিনিতে কয়েকটি কটেজ চালায় আসনপানি গ্রামের বনপরিচালন কমিটি। কমিটির সভাপতি মণীশ টুডু বলেন, “পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। সেখান থেকে ভাল আয় হচ্ছে। সেই টাকা গ্রামের উন্নয়নের কাজে
খরচ করা হবে।’’
বন দফতর সূত্রে খবর, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে কম-বেশি ৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আয় হয়েছে কটেজ থেকে। ২০২১-এ করোনা পরিস্থিতির কারণে আয় তেমন একটা হয়নি। প্রকৃতি ভ্রমণকেন্দ্রে দু’টি তাঁবু বসানো হচ্ছে।পর্যটকেরা যাতে মারাংবুরু পাহাড়র উপর থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও থাকছে। পাহাড়ের গায়ে ট্রেকিং রুট-ও তৈরি হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় ও বন দফতর সূত্রে খবর, ২০০১-এর ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বন প্রতিমন্ত্রী বিলাসীবালা সহিস দুয়ারসিনি ভ্রমণকেন্দ্রে তিনটি কটেজের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০৬-এ বিস্ফোরণে কটেজ উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। ২০০৮-এ বন্ধ করে দেওয়া হয় পর্যটনকেন্দ্রের দরজা।
২০১১-এ রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে, আবার পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে সেখানে। দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পরে, কটেজ চালু করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ২০১৬-এ অর্থবরাদ্দ হয়। তবে টাকার অভাবে থমকে ছিল কাজ। ২০১৮-এ ফের কাজ শুরু হয়। সংস্কারের পরে কটেজগুলিকে নতুন রূপ দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেই মাথাচাড়া দেয় করোনা। সংক্রমণ কমলে ২০২১-র ১ ফেব্রুয়ারি ফের খোলে পর্যটনকেন্দ্র। পরে আবার করোনা মাথাচাড়া দেওয়ায় পর্যটনকেন্দ্র কয়েক মাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংক্রমণ থিতু হওয়ায় অক্টোবরে আবার চালু হয় কটেজগুলি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আরও কটেজ চালু হলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশও ঘটবে। বন দফতর জানিয়েছে, এ নিয়ে তাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।