অপারেশনের পর বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। রোগী আপাতত সুস্থ আছেন বলে খবর। —নিজস্ব চিত্র।
বর্শা বিঁধে গলা এফোঁড়-ওফোঁড়। যুবকের অবস্থা দেখে শিউরে উঠেছিলেন পরিবারের লোকজন। প্রাণসংশয় ছিল তাঁর। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় গলায় গেঁথে থাকা বর্শা বার করে আনলেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। রোগী আপাতত সুস্থ আছেন বলে খবর।
অসাবধানবশত পুরুলিয়ার বাসিন্দা ২৩ বছরের হেমন্ত বেসরার গলায় গেঁথে যায় একটি বর্শা। রবিবার দুপুরে এই ঘটনার পর তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তখনই হেমন্তের গলায় অস্ত্রোপচার শুরু হয়। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে চলে চিকিৎসা। রাত ১০টা নাগাদ অস্ত্রোপচার করে যুবকের শরীর থেকে বর্শাটিকে আলাদা করতে সমর্থ হন চিকিৎসকরা। এমন জটিল অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় খুশি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক দল। চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন রোগীর পরিবার।
প্রথমে হেমন্তকে নিয়ে যাওয়া হয় সারেঙ্গা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে তাঁকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকেরা। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনার খবর পাওয়ার পরই চিকিৎসক দল তৈরির কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার দুপুরেই হাসপাতালে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ চিকিৎসকদের জরুরি তলব করা হয়। একাধিক শল্য চিকিৎসক, অজ্ঞান করার চিকিৎসক, নার্সিং কর্মী এবং সহকারীদের একটি দল গঠন করা হয়। আহত ব্যক্তির শরীরের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা সেরে বিকেল ৫টা নাগাদ অস্ত্রোপচার শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় আমরা খুব খুশি। চিকিৎসক দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই সাফল্য এসেছে।’’
হেমন্তের গলায় গেঁথে থাকা বর্শা বার করতে কম কসরৎ করতে হয়নি চিকিৎসকদের। ওই দলে থাকা মনোজ চৌধুরী নামে এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘বর্শাটি যে ভাবে গলায় ঢুকেছিল তাতে ওই যুবকের খাদ্যনালী এবং শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে পথ দিয়ে বর্শাটি গলায় প্রবেশ করেছে, সেই পথ দিয়ে তা টেনে বার করা অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রিকে ডেকে বর্শার হাতল কেটে ঘাড়ের দিকে ফুটো করে বর্শার ফলাটিকে বার করে আনা হয়। রোগীর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং যে পেশিগুলির ক্ষতি হয়েছে তার চিকিৎসা করা হয়েছে। রোগী এখন ভাল আছেন।’’
হেমন্তের ভাই জয়ন্তের কথায়, ‘‘যে ভাবে দাদার গলায় বর্শাটি গেঁথে গিয়েছিল তাতে ওকে বাঁচানো যাবে বলে ভাবতে পারিনি। চিকিৎসকেরা সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ’’