অনমিত্র বারিক ও বিশ্বনাথ আচার্য। নিজস্ব চিত্র
তাঁরাও হারিয়েছেন আত্মজন। পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়নি মাসের পর মাস। তবু ছেদ পড়েনি কর্তব্যে। চিকিৎসক দিবসে সকলে কুর্নিশ জানাচ্ছেন এই অতিমারির সময় নিরলস কাজ করে চলা এই কোভিড যোদ্ধাদের।
করোনায় প্রায় দু’বছর ধরে বিপর্যস্ত সারা সমাজ। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষ আশার আলো দেখেছেন। কারণ চিকিৎসকেরা সর্বস্ব উজাড় করে এই কঠিন মহামারিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছেন।
সে রকমই এক জন হলেন সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক অনমিত্র বারিক। তিনি গত বছর থেকে নাগাড়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করে চলেছেন। তাঁর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন অনেকে। নিজেও দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর একাধিক পরিচিত পরিজনের জীবন কেড়েছে ভাইরাস। কিন্তু তার পরেও কর্তব্য থেকে পিছু হটেননি।
অনমিত্রবাবু জানান, গত বছর অক্টোবরে তিনি প্রথম বার করোনা আক্রান্ত হন। তার পরে আবার সাত মাসের মাথায় দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হন। তাঁর কথায়, ‘‘দিন কুড়ি আগে আমার ছোট মামা হৃদরোগে মারা গিয়েছেন। আমি তাঁর কাছেই বড় হয়ে উঠেছি। তাঁকে শেষবারের দেখার যাওয়ার সুযোগও পাইনি। একই রকম ভাবে আমার দাদার মতো ছিলেন চিকিৎসক অমল রায়। করোনা তাঁর প্রাণ নিয়েছে। এগুলো মেনে নিতে পারি না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনেক মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি। তেমনই অনেকের মৃত্যু আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই আক্ষেপ সারা জীবন থাকবে।’’
নিজের কর্তব্য করে যাচ্ছেন সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আর এক চিকিৎসক বিশ্বনাথ আর্চার্যও। তিনিও করোনার প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা তাঁরও এক আত্মীয়ের প্রাণ নিয়েছে। এক বছরের সন্তান রয়েছে বাড়িতে। কিন্তু ,পরিবার পরিজনকে দূরে রেখে তিনি রোগীদের চিকিৎসা করে গিয়েছেন।
বিশ্বনাথবাবু শল্য চিকিৎসক। তা সত্ত্বেও তিনি করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রায় দু’মাস সিউড়ি কোভিড হাসপাতালে টানা ডিউটি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের উপরে ভরসা করেই তো রোগীরা ছুটে আসেন! তাই তাঁদের পরিষেবা দিতে সব রকম প্রচেষ্টা করি।’’ তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক। তাঁর শ্যালক ও তাঁর স্ত্রী-ও চিকিৎসক। তা সত্ত্বেও তাঁর শ্বশুর এক প্রকার চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘লকডাউনের কারণে আমরা কেউ তাঁর কাছে পর্যন্ত যেতে পারিনি। এই আক্ষেপ সারাজীবন থেকে যাবে। সত্যি বলতে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রত্যেক চিকিৎসক পরিজনের কথা ভুলে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। সেটাই আমাদের কর্তব্য।’’