সেজে উঠছে বাঁকুড়া সার্কিট হাউস। নিজস্ব চিত্র
এর আগে বিধানসভা ভোটের প্রচারে শেষ বার জেলায় এসেছিলেন তিনি। সে বার রাজ্য জুড়ে তৃণমূল ভাল ফল করলেও, বাঁকুড়ায় আশানুরূপ ফল হয়নি। বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে, জেলায় এসে কী বার্তা দেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বাঁকুড়ার তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে।
গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই জেলায় মাথাচাড়া দেয় বিজেপি। লোকসভা ভোটে জেলার বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর, দু’টি কেন্দ্রেই বড় জয় পায় তারা। বিধানসভা ভোটেও জেলার ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে আটটিতে জিতেছে বিজেপি। তবে সদ্য পুরভোটে জেলার তিনটি শহরেই ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। উল্টে, বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও দলের নেতৃত্বের সাথে নিচুতলার কর্মীদের যোগাযোগের অভাব রয়ে গিয়েছে বলে দলেরই একাংশের দাবি। এরজন্য বিধানসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় ভাবে জেলায় বড় দলীয় কর্মসূচি না হওয়া ও সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও কিছু দুর্বলতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন দলীয় কর্মীদের বড় অংশ।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলে বুথ স্তরের কর্মীদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রেই জোর দিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। সভার দায়িত্বে থাকা তৃণমূল নেতা তথা তালড্যাংরার প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিটি বুথ থেকে কর্মীদের সভায় আনা হবে। সে জন্য ব্লক ও অঞ্চল নেতৃত্বকে বৈঠক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের নিচুতলার কর্মীদের চাঙ্গা করাই পাখির চোখ রাজ্য নেতৃত্বের। তবে দলের মধ্যেই চলতে থাকা নেতাদের একাংশের মতানৈক্য নিয়েও নেত্রী বার্তা দিতে পারেন বলে মনে করছে দলের একাংশ। তাঁদের দাবি, বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলায় দলের মধ্যে ফাটল সাম্প্রতিক সময়ে বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান পদ নিয়ে দলের দুই নেতা-নেত্রীর মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্বের নজরেও পৌঁছেছে। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় অবশ্য কোনও দ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ।
পুরভোটের পরে কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও, বাঁকুড়ায় এখনও চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল তৈরি করতে পারেনি শাসক দল। দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপের কারণেই তা তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে বলে শহর তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ। যদিও তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র। বিষয়টি নিয়ে নেত্রীর সভায় আলোচনা হতে পারে, মনে করছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘বিধানসভা ভোটের পর থেকেই দলে কিছুটা ছন্নছাড়া পরিস্থিতি চলছে। নতুন জেলা সভাপতি দায়িত্ব নিলে দলে জেলা ও ব্লক কমিটির পুনর্গঠন হয়। সে সব কিছুই হয়নি। নেতারা নিজেদের মতোই কাজ করে চলেছেন। কর্মীদের সঙ্গে নেতাদের সমন্বয়ের একটা অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’’ নেত্রীর বার্তায় জেলায় সাংগঠনিক স্তরে কাজে গতি বাড়বে, আশায় রয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকেই।