অঝোরে: বুধবার সকালে ঘণ্টাখানেক ধরে তুমুল বৃষ্টি চলল বাঁকুড়া শহরের পাশে মিথিলায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
মাইথন, পাঞ্চেত ও দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে বুধবার ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে দু’জেলায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ফের উদ্বেগ বেড়েছে। এতে কিছু কিছু এলাকায় জমির জমা জল আরও বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন চাষিরা। এই পরিস্থিতিতে ফসলের ক্ষতি কমাতে অণু-খাদ্য বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। সবার আশঙ্কা, অতি দ্রুত আবহাওয়ার উন্নতি না ঘটলে বিশেষত আনাজের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিভিসির ছাড়া জলে দামোদর নদ ঘেঁষা নিতুড়িয়া ও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ১৫-১৬ টি মৌজার ধানজমি থেকে বুধবারও জল নামেনি। মঙ্গলবার জলস্তর কমতে থাকলেও বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সেখানে আবার জল জমতে শুরু করেছে। বড়জোড়ার মানাচরের চাষের জমিও জলমগ্ন। তবে দামোদর নদে জল বৃদ্ধি নিয়ে আপাতত সতর্কবার্তা নেই বলে জানাচ্ছেন এসডিও (বাঁকুড়া সদর) সুশান্তকুমার ভক্ত। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে প্রায় ৬০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে।’’
এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি নামায় দুর্ভাবনায় পড়ে গিয়েছেন চাষিরা। সোনামুখীর তেলরুই গ্রামের নিতাই গড়াই বলেন, ‘‘পটলের জমি থেকে সবে জল নেমেছে। এ বার ছত্রাকনাশক দিতাম। কিন্তু আবার বৃষ্টি শুরু হল। ওষুধ দিলেও ধুয়ে যাবে। গোড়াপচা রোগ ঠেকাব কী করে?’’ পাত্রসায়রের পাঁচপাড়ার আনাজ চাষি কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘এ দিন সকালে আনাজ গাছে ছত্রাকনাশক ছেটানোর পরেই বৃষ্টি নামল। সব ধুয়ে গেল!’’
বড়জোড়ার মাঝেরমানার মৃদুল মিস্ত্রির মতো অনেকের জমি থেকে এখনও জল নামেনি। পাত্রসায়রের বেলুট গ্রামের দেবাশিস পাল, বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘ধানগাছের বীজতলা ডুবে নষ্ট। এ বার বীজ ধান কোথায় পাব? এ মরসুমে আর বোধ হয়, চাষ করা যাবে না।’’
অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির কৃষকদের কাছে সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ছিল আশীর্বাদের মতো। সেচের খরচ বাঁচানো গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই সব এলাকা অর্থাৎ, বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর, গঙ্গাজলঘাটি প্রভৃতি এলাকার কৃষকদের বক্তব্য, রোদ না ওঠায় জমিতে আগাছা বাড়ছে। সে সব পরিষ্কার করতেই খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ ও গুনিয়াড়া পঞ্চায়েত এবং রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চেলিয়ামা পঞ্চায়েতের মোট ৬৫ হেক্টর জমি ক’দিন ধরেই ফুলে ওঠা দামোদরের জলের নীচে রয়েছে। এলাকার চাষিদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোর পরে, জমি থেকে জল নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু এ দিনের বৃষ্টিতে আবার জমিতে জল কিছুটা বেড়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, নিতুড়িয়ায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের গুরুডির চাষি জিতেন গোস্বামী ও রামগড়ের চাষি সমীর গড়াই বলেন, ‘‘জমি থেকে জল নামতে শুরু করার পরে আশা করেছিলাম, কিছু পরিমাণ ধান হয়তো বাঁচানো যাবে। নতুন করে ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ায়, সে আশাও ছেড়ে দিয়েছি।’’ নিতুড়িয়া ও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা যথাক্রমে পরিমল বর্মণ ও মুক্তেশ্বর সর্দার বলেন, ‘‘ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আখেরে সমস্য়ায় পড়েছেন চাষিরা।’’ তাঁদের আশ্বাস, বাংলা শষ্য বিমা যোজনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
এখন অতিবৃষ্টি বেশি হওয়ায় অন্য আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। বিষ্ণুপুর মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) অমিতাভ পান্ডের মতে, ‘‘বিষ্ণুপুর মহকুমার খরিফ মরসুমে আনুমানিক বৃষ্টিপাত হয় ১,৪৫০ মিলিমিটার। সেখানে ইতিমধ্যেই প্রায় ১,২০০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে শেষের দিকে ধানের শিষ-মুকুল আসার সময়ে বৃষ্টির অভাবে অপুষ্টিতে ভুগতে পারে ফলন।’’
এই পরিস্থিতিতে তাঁর পরামর্শ, ধানের ক্ষেত্রে প্রতি বিঘাতে তিন থেকে চার কিলোগ্রাম পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
আনাজের ক্ষেত্রে কপার অক্সিক্লোরাইড ৬০ গ্রাম প্রতি ব্যারেলে মিশিয়ে গোড়া ঘেঁষে শিকড় ভিজিয়ে ছেটাতে হবে। এ ছাড়া, বিঘা প্রতি পটাশ ছয় থেকে আট কিলোগ্রাম পরিমাণ প্রয়োগ করা যেতে পারে। ছত্রাকনাশক হিসেবে কার্বেন্ডাজ়াইম ১৫ থেকে ২০ গ্রাম প্রতি ব্যারেলে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।