আন্ত্রিক ছড়াতে শুরু করেছে বলরামপুরে। এই ব্লকের বড় উরমা, কেন্দাডি ও মাচাটাঁড়-সহ লাগোয়া কয়েকটি গ্রামে গত চার-পাঁচ দিন ধরে আন্ত্রিকের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র বড় উরমা গ্রামেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ ছুঁয়েছে। এই গ্রামের এক কিশোরীরও মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীর নাম রাতুলি মাহাতো (১৬)। সে স্থানীয় হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার এই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। কিশোরীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তবে তাঁর মৃত্যু যে আন্ত্রিকেই হয়েছে, তা নিয়ে সন্দিহান স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
ওই কিশোরীর আত্মীয়েরা জানিয়েছেন, রাতুলির বাবা ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে কাজ করেন। বাড়িতে মা ও মেয়ে থাকে। রবিবার রাত থেকে তার পেটের গোলমাল শুরু হয়। সঙ্গে বমি। সোমবার ভোরের দিকে তার মৃত্যু হয়। বড় উরমা গ্রামে কিশোরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে ওই গ্রামে যান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উপ মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক (২) গুরুদাস পাত্র। তিনি গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। বাসিন্দারা কোথাকার জল খান তা খোঁজ নেন। গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে জানান, নলবাহিত ও নলকূপের জল পান করা হয়। তবে বাড়ির অন্যান্য কাজে তাঁরা পুকুরের জল ব্যবহার করেন। উপ মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, পানীয় জলের উৎসগুলি থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
তিনি সে দিন মৃত কিশোরীর পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন। পরে গুরুদাসবাবু বলেন, ‘‘ওই কিশোরীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়নি। অথচ কাছেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। একসঙ্গে বমি-পায়খানা হওয়ায় মেয়েটিকে সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। বাড়ির লোকজনের বক্তব্য অনুযায়ী পেটের রোগের কারণেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক না দেখায় আন্ত্রিকেই মৃত্যু হয়েছে, এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রাম থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। এ ছাড়া মাচাটাঁড় গ্রামেও আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়েছে। বড় উরমার বাসিন্দা শ্রাবণ মাহাতো, রাধামোহন কুমার প্রমুখ জানিয়েছেন, পেট ব্যথা ও পায়খানা সঙ্গে বমি হচ্ছে। প্রায় সবারই এক উপসর্গ। এলাকার একাধিক গ্রামে আন্ত্রিক ছড়াতে শুরু করায় মঙ্গলবার গ্রামে যায় মেডিক্যাল টিম। ওই দলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এপিডেমোলজিস্ট সতীনাথ ভুঁইয়াও ছিলেন। গ্রাম থেকে তাঁরা মলের নমুনা সংগ্রহ করেন। যে নলকূপ থেকে গ্রামবাসী পানীয় জল সংগ্রহ করেন, সেই জলও পরীক্ষা করা হয়। জানা গিয়েছে, গ্রামের কয়েকটি নলকূপের জলই দূষিত বলে পরীক্ষায় জানা গিয়েছে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, কোনও কোনও নলকূপের গোড়া সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো না থাকায় দূষিত জল গোড়া দিয়ে চুঁইয়ে পাইপের গা বেয়ে মাটির নীচে ঢুকছে। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরাও গ্রামে ঘুরে এ রকম কয়েকটি নলকূপ দেখতে পান। এই ঘটনা তাঁরা প্রশাসনের নজরেও এনেছেন। সতীনাথবাবু বলেন, ‘‘মলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যেখানে পানীয় জল শোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে।’’
এ দিন বেশ কয়েকটি নলকূপের মুখ খুলে ব্লিচিং ও ক্লোরিন ইত্যাদি দেওয়া হয়। বলরামপুরের বিডিও পৌষালি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আজ বুধবার থেকে প্রয়োজনে গাড়ি পাঠিয়ে ওই গ্রামে জল সরবরাহ করা হবে। যেখান থেকে পানীয় জল আসে সেই উৎসগুলিও শোধন করতে
বলা হয়েছে।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, ‘‘কয়েকটি গ্রামে আন্ত্রিক ছড়ালেও পরিস্থিতি এখন আয়ত্তের মধ্যে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা নজর রাখছেন। নতুন করে আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ দিন ভর্তির খবর নেই।’’ তিনি জানান, বড়উরমার ওই কিশোরীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেনি। তাই তার মৃত্যু কী ভাবে হল তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেন না।