ঢাকের দড়িতে টান। নিজস্ব চিত্র
কলকাতার হাতিবাগানের এক পুজো-কর্তার ফোন আসতেই হাসি ফুটল পরেশ রুইদাসের মুখে। যেন গত দু’বছরের অপেক্ষা শেষ হল। করোনায় গত দু’বছর কার্যত নীরব ছিল পাত্রসায়রের বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের ঢাকিদের গ্রাম, রুইদাসপাড়া। তবে এ বারে সেপ্টেম্বর শুরু থেকে কলকাতার পুজো-কর্তাদের ফোনে অন্য সুরে বাজছে ঢাকিপাড়া।
পঞ্চাশ জনেরও বেশি ঢাকির বাস ওই পাড়ায়। তাঁরা জানাচ্ছিলেন, বরাত আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ব্যস্ততা। সকালে খেতমজুরি সেরে এসে ঢাকের দড়িতে টান দিতে বসছেন। সন্ধ্যা নামলেই এক সঙ্গে চলছে তালিম, অনুশীলন। কাঁসিতে তাল ঠুকছে ছোটরাও। এক ঢাকি মদন রুইদাস জানান, গত দশ বছর ধরে চন্দননগরের একটি পুজোয় ঢাক বাজাতে যান। ভাল রোজগার হয়। আবাসনের বাসিন্দারা অনেকে পুরনো জামাকাপড় দেন। তাঁর কথায়, “তবে গত দু’বছর ডাক আসেনি। ভীষণ কষ্টে কেটেছে। এ বারে ডাক আসায় পরিবারের সবাই খুশি।”
বরাত আসায় চিন্তামুক্ত সন্টু রুইদাসও। তিনি বলেন, “প্রতি বছর বরানগরের একটি পুজোয় যাই। সেখান থেকে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজোর বায়নাও পেয়ে যাই। ওই টাকায় গোটা বছরের তেল-নুনের খরচ উঠে যায়। দু’টো বছর যে কী ভাবে কেটেছে, বলার নয়। এমন দিন যেন না আসে।” ভদ্রেশ্বরের সেনবাড়িতে ঢাক বাজাতে যাওয়া তারাপদ রুইদাস আবার বলছেন, “ওই পরিবারের সবাই ভীষণ ভালবাসেন। অনেক বকশিশ দেন। সংসারের খোঁজ-খবর নেন। দু’বছর পরে আবার ওই মানুষগুলির সঙ্গে দেখা হবে। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।”
ঢাকিরা জানাচ্ছিলেন, ইতিমধ্যে পাড়ার প্রায় সকলে বরাত পেয়েছেন। কেউ কেউ পঞ্চমীতে শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে গিয়ে দাঁড়াবেন। পুরনো দিনের মতো বায়না করে নিয়ে যাবেন কোনও না কোনও পুজো-কর্তা, সে ভরসা আছে। তার পরে, পুজো সেরে ঢাকিরা বাড়ি ফিরলে রুইদাস পাড়ায় শুরু হবে উৎসব। সন্টু, তারাপদেরা জানাচ্ছিলেন, বাড়ির সকল পুজো শেষের পথ চেয়ে থাকেন। কলকাতা থেকে ফেরার সময়ে তাঁরা নতুন, পুরনো শাড়ি-কাপড় নিয়ে আসেন। উপরি রোজগারের পয়সায় তখন বাড়িতে দু’টো পদ বেশি হয়।
কলকাতায় যাওয়ার আনন্দ বছর দশেকের এক খুদের চোখে-মুখেও। সে বলে, “বাবার সঙ্গে কলকাতায় কাঁসি বাজাতে যেতে খুব ভাল লাগে। ওখানে আমাকে জামা দেয়। খেলনাও দেয়।”