পরভীন কাসওয়ান ও তাঁর ভিজিটিং কার্ড। নিজস্ব চিত্র
আপাতদৃষ্টিতে আইভরি রঙের উপরে ফরেস্ট গ্রিনে ছাপা কার্ডটিকে আর পাঁচটা ভিজিটিং কার্ডের সঙ্গে আলাদা করা শক্ত। কিন্তু, কার্ডের নীচের অংশে ইংরেজিতে লেখা একটি লাইনেই তফাত বুঝিয়ে দেয়। সেখানে লেখা— ‘দিস কার্ড হোয়েন প্ল্যান্টেড, গ্রোজ় ইনটু এ ব্রাইট বেসিল ট্রি’! অর্থাৎ, এই কার্ডটি মাটিতে রোপণ করলে একটি উজ্জ্বল তুলসী গাছের জন্ম নেবে। পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে এমনই অভিনব ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়েছেন বীরভূমের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার পরভীন কাসওয়ান। ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস বা আইএফএস উত্তীর্ণ ওই আধিকারিক বীরভূমের বিভাগীয় বনাধিকারিক বা ডিএফও হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মাস দুই আগে। তার পরেই ওই কার্ড তৈরি করান। যাঁরাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন, তাঁদের দিকেই এগিয়ে দিচ্ছেন কার্ড।
কার্ড ছাপানোর পর, নিজের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে পরিবেশ-বান্ধব কার্ডের ছবি পোস্ট করে ওই আমলা লিখেছেন, “অ্যাজ় এ পার্টিং গিফট’। কার্ডে নিজের নাম, ই-মেল আইডি এবং পদ ছাড়া কিছু উল্লেখ করেননি পরভীন। কিন্তু, গাছ লাগানোর বার্তা বহনকারী তাঁর অভিনব কার্ডটি রীতমতো প্রশংসা কুড়িয়েছে তাঁর ফলোয়ারদের। সামাজিক মাধ্যমে কার্ডটিকে দেখে অনেকে তাঁর এই ভাবনা কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাজস্থানের একটি ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা পরভীন কাসওয়ানের বরাবরই মেধাবী। স্কুলের পাঠ শেষে করে বেঙ্গালুরু ইন্ডিয়ান ইন্টিটিটিউট অব সায়েন্সেস থেকে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং -মাস্টার্স করেছেন। এম ফিল করেছেন। চাইলেই তিনি ভিন্ন পেশায় যেতে পারতেন। কিন্তু, সেটা চাননি। বছর ত্রিশের ওই আমলা বলছেন, ‘‘ওয়াল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফির শখ, পরিবেশের প্রতি ভাললাগা থেকেই এই কাজ বেছে নিয়েছি।’’আইএফএস পড়ার সময় বনের যত্ন, প্রতিরোধ, সংরক্ষণ ও বনসম্পদের উন্নয়ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের পরে
পরিবেশের প্রতি ভাললাগা আরও বেড়েছে। সঙ্গে তৈরি হয়েছে দায়িত্বও। সপ্রতিভ ওই আমলা শুধু নিজের পদ সামলাচ্ছেন না, সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন পরিবেশ সচেতনতার নানা আঙ্গিক তুলে ধরতে। আইএফএস এবং পরিবেশ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন। তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা কয়েক হাজার। অভিনব ভিজিটিং কার্ড ছাপানোর মূলে সেই ভাবনাই কাজ করেছে। পরভীনের কথায়, ‘‘পরিবেশ রক্ষায় এবং সচেতনতায় আমাদের প্রত্যেকের কিছু কর্তব্য রয়েছে। আমি চাই, অন্যদের তা মনে করিয়ে দিতে।’’