—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জলাধার সংস্কারের কাজ চললেও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে তিলপাড়া থেকে বোরো চাষের জন্য সেচের জল দিতে পারবে সেচ দফতর। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পরিষদ ও কৃষি দফতরকে সেচ বিভাগের দেওয়া এই বার্তা চাষিদের খুবই স্বস্তি দেবে মনে করেছেন কৃষি দফতরের কর্তারা।
উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সূর্যনারায়ণ ঘোষ জানান, ময়ূরাক্ষী থেকে সেচের জল পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস মিলেছে। যেটুকু জানা গিয়েছে, তাতে বীরভূমে ৪২ হাজার একর জমিতে সেচের জল দেওয়া যাবে। তা গত বারের থেকে অনেকটাই বেশি। গত বার জল দেওয়া দেওয়া হয়েছিল ১৮ হাজার একরের জন্য।
জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম খান জানাচ্ছেন, জলের উচ্চতা কমিয়ে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জল দেবার কথা জানিয়েছেন ময়ূরাক্ষী ক্যানাল সেচের ইঞ্জিনিয়াররা। কৃষি কর্মাধ্যক্ষ জানান, এখনও কোন কোন ব্লকের কোন কোন মৌজায় জল দেওয়া হবে সেটা ঠিক হয়নি। সেটা আগামী বৈঠকে আলোচিত হবে। তাঁর কথায়, ‘‘জলাধার সংস্কার প্রয়োজন ছিল। চাষিদের কথাও ভাবা হল।’’
সেচ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরাক্ষী নদীর গতিপথে থাকা মশানজোড় জলাধারের জলেই সেচ হয় জেলার কমবেশি ২০-৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে সেটা নির্ভর করে কী পরিমাণ জল জলাধারে মজুত রয়েছে তার উপরে।
সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বোরো চাষের জন্য সেচের জল দেওয়া হয়ে থাকে। তার বহু আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোথায় কত পরিমাণ জল দেওয়া হবে বোরো চাষে। সেই অনুয়ায়ী কৃষি দফতরও পরিকল্পনা করে।
সেচ দফতর সূত্রে খবর, এ বার শেষ বেলায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় মশানজোড়ে জল রয়েছে। কিন্তু এ বার সেখানে সংশয় তৈরি করেছিল তিলপাড়া জলাধার সংস্কারের কাজ। কারণ মশানজোড় থেকে জল আসে তিলপাড়া জলাধারে। সেখান থেকে বিভিন্ন সেচ খালের মাধ্যমে বীরভূমের একটা বড় অংশ এবং পড়শি মুর্শিদাবাদ জেলায় বোরো ধানে চাষে সেচের জল দেওয়া হয়।
সাত দশকের বেশি পুরনো তিলপাড়া জলাধারে বেশ কিছু ফাটল দেখা দিয়েছিল। দিল্লি থেকে আসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সংস্কারের কাজে হাত দেওয়ার আগে জল ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন শুকিয়ে গিয়েছে গোটা জলাধার। তাহলে সেচের জল পাবেন কী ভাবে সেটাই ভাবাচ্ছিল চাষিদের।
সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, তিলপাড়া জলাধারা স্বাস্থ্য খারাপ। যখন সেচের জল দেওয়া হবে তখনও খারাপই থাকবে। তা সত্ত্বেও, সেচ দফতরের নকশা বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক হয়েছে জলের উচ্চতা ২০২ ফুট পর্যন্ত তোলা হলে সেচখালে জল ঢোকানো যাবে, আর জলাধারেও চাপ সৃষ্টি করবে না। তত দিনে সংস্কারের কাজটাও এগোবে।
অন্য বার বোরো সেচের জন্য জলের উচ্চতা ২০৫ ফুট থাকত। এ বার উচ্চতা কমিয়ে বেশি সময় ধরে জল দেওয়া হবে। কৃষি দফতরের তথ্য বলছে, জেলায় গড়ে প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। এবারও তাই। যেহেতু নিশ্চিত সেচ ছাড়া বোরা চাষ সম্ভব নয়। তাই চাষের এলাকা নির্ধারণে ময়ূরাক্ষীর জল পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।