বিষ্ণুপুর থানার সামনে জমায়েত। নিজস্ব চিত্র।
কয়েকমাস আগের ঘটনা। তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র জেরে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান ‘খুন’ হওয়ার পরে ভয়ে এলাকাছাড়া হন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের বেলিয়াড়া গ্রামের অসংখ্য মানুষ। বারবার প্রশাসনিক ও দলীয় ভাবে সাহায্য চেয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
শেষমেষ ঘরে ফেরার দাবিতে মঙ্গলবার তাঁরা বিক্ষোভ দেখালেন বিষ্ণুপুর থানায়। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের বাড়ি ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ১ অগস্ট বেলিয়াড়া গ্রামে তৃণমূলের উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শেখ বাবর আলিকে খুনের অভিযোগ ওঠে। তার পর থেকে আতঙ্কে গ্রামছাড়া শতাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের তাসমিনা খাতুনও রয়েছেন। এ দিন তিনি অভিযোগ করেন, “কিছু সমাজবিরোধী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাকে ভয় দেখিয়ে পঞ্চায়েতে ঢুকতে দিচ্ছে না। মিথ্যা মামলাতেও ফাঁসানো হয়েছে।’’
এতে পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘দলেরই আর একটি গোষ্ঠী এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের পরিবারগুলির উপরে হামলা চালিয়ে ঘরছাড়া হতে বাধ্য করেছে। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। শতাধিক মানুষের কাজকর্ম বন্ধ। পুলিশ-প্রশাসন আদৌ কী ভূমিকা নিচ্ছে, বুঝতে পারছি না।”
ঘরছাড়া বদরু আলম মণ্ডল, মিলন মোল্লাদেরও দাবি, ‘‘মিথ্যা মামলায় হাজতবাস হয়েছে কয়েকজনের। জামিন পেয়েও এখনও অনেকে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। অসহায় শিশুরাও আজ ঘরছাড়া। তার পরেও মহকুমা ও জেলা প্রশাসন নির্বিকার। বাধ্য হয়েই এ দিন বাড়ি ফেরার আর্জি নিয়ে থানায় যেতে হয়।”
‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ কারণেই এ সমস্যা, তা কার্যত স্বীকার করে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে ঘরছাড়াদের। কয়েকদিন আগেই এক বার আলোচনা হয়েছে। গ্রামের পরিবেশ ও পরিস্থিতি নজরে রাখছে পুলিশ। প্রশাসনের নির্দেশ পেলেই তাঁদের বাড়ি ফেরানো হবে।”
তবে বিভিন্ন শংসাপত্র দেওয়ার বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি সহায়তা করছে বলে জানিয়ে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, “দিন চারেক আগে উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান লিখিত আবেদনে পঞ্চায়েতে ঢুকতে তাঁর কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তাতে সাধারণ মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও এসডিপিও (বিষ্ণুপুর)-কে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।”
এ দিকে, বিজেপির বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি সুজিত অগস্তি বলেন, “তৃণমূলের প্রধান পঞ্চায়েতেই ঢুকতে পারছেন না। গ্রামে না থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে অসুবিধা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। তাই গ্রামবাসী এখন বিজেপিকে চাইছেন।”