পুরুলিয়া শহরে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের জমায়েত। নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষা-সহ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য পৃথক সাঁওতালি পর্ষদ গঠনের দাবিতে এ বার পথে নামল আদিবাসী জনজাতিদের সংগঠন, ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। দাবি পূরণে মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরে জমায়েত ও মিছিল করে সংগঠনটি।
জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘিরে এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ রবীন্দ্রভবনের সামনে থেকে সংগঠনের দীর্ঘ মিছিল শুরু হয়। হলুদ-সবুজ পতাকার সঙ্গে গাছের ডাল, তির-ধনুক, টাঙি হাতে মিছিলে দেখা গিয়েছে অনেককে। পা মেলান মহিলারাও। সাহেববাঁধ রোড ধরে জেলা প্রশাসনিক ভবনের দিকে এগোনো মিছিলের জেরে শহরে তীব্র যানজট হয়।
মিছিলে সংগঠনের তরফে পঠন-পাঠনের উন্নয়নে সাঁওতালি বোর্ড গঠন, সাঁওতালি ভাষার স্কুলগুলিতে থাকা স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকার মর্যাদা দেওয়া, জমি সংক্রান্ত ‘এলআর’ রেকর্ডে যে ভাবে জাতি হিসেবে সাঁওতাল জাতি উল্লেখ করা হয়, সেখানে ‘আরএস’ রেকর্ডেও সাঁওতাল জাতির উল্লেখ থাকা, অযোধ্যা পাহাড়ে সাঁওতালদের ঐতিহ্যপূর্ণ পীঠস্থান—‘সুতান টান্ডি’ ল-বীর-বাইসির নামে সংরক্ষণ করে পাট্টা দেওয়া-সহ নানা দাবি তোলা হয়।
পাশাপাশি, সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা পারগানা রতনলাল হাঁসদা দাবি করেন, ‘‘অযোধ্যা পাহাড়ের ‘সুতান টান্ডি’ আমাদের সম্প্রদায়ের ‘সংসদ’ বা ‘বিধানসভা’। আমাদের প্রচলিত সামাজিক রীতি-নীতি সংক্রান্ত কোনও সংযোজন বা বিয়োজন সেখানে আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত হয়। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে সে জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা দাবি তুলেছি, সেই জমি সম্প্রদায়ের ‘ল-বীর-বাইসি’র নামে সংরক্ষণ করতে হবে।’’
সংগঠনের রাজ্য কমিটির নির্দেশে এ দিন প্রতি জেলায় মিছিল হয়েছে জানিয়ে রতনবাবু জানান, জেলাশাসক তাঁদের বক্তব্য সময় নিয়ে শুনেছেন। আশা করা যায়, দাবিগুলি মেটাতে দ্রুত পদক্ষেপ হবে। জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের এক্তিয়ারে থাকা বিষয়গুলি দেখা হবে। বাকিগুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
এ দিকে, রাজ্য জুড়ে জাল তফসিলি উপজাতি শংসাপত্র বাতিল করতে পদক্ষেপ করা, প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সাঁওতালি মাধ্যমে পড়াশোনার পরিকাঠামোর উন্নয়ন, রাজ্য জুড়ে বন্ধ থাকা আদিবাসী পড়ুয়াদের হস্টেলগুলি অবিলম্বে খোলা সহ-২৫ দফা দাবিতে মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিল ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। বাঁকুড়া শহরে মিছিলও হয়। নেতৃত্বের অভিযোগ, ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করে বহু অ-আদিবাসী সুবিধা নিচ্ছেন। প্রকৃত আদিবাসী মানুষজন বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের তরফে দাবিগুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।