জল সঙ্কট পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে .পুরুলিয়া পুরসভার জলেক ট্যাঙ্কা সাহায্যে সঙ্কট মেটানোর চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ টালবাহানার পরে জল-সমস্যা মিটলেও ফের জলাভাব দেখা দিয়েছে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পুরনো ক্যাম্পাসে কোনও সমস্যা না থাকলেও শহরের বাইরের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে জল আসছে না। পাইপলাইনে সমস্যার কারণেই এই পরিস্থিতি বলে দাবি।
ঘটনা হল, হাতোয়াড়ার ওই ক্যাম্পাসে জলসমস্যা দীর্ঘ দিনের। গভীর নলকূপ খুঁড়ে জল-সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হলেও সেই উৎসগুলি থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম জল মেলায় কংসাবতীর পিঁড়রা ঘাট থেকে পৃথক একটি পাইপলাইন তৈরি করে জল আনার ব্যবস্থা করা হয়।
জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “ওই ক্যাম্পাসে জল-সমস্যা প্রথম থেকেই। বছর দেড়েক আগে পৃথক পাইপলাইন তৈরির পরে সমস্যা মিটেছে। তবে প্রায় সপ্তাহখানেক আগে ওই পাইপলাইনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ফের জলসঙ্কট তৈরি হয়েছে।”
বর্তমানে ওই ক্যাম্পাসে ডাক্তারি পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি বিএসসি নার্সিংয়ের পঠনপাঠনও চালু রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সব্যসাচী দাস জানান, এমবিএস পাঠ্যক্রমে চারশো ও বিএসসি নার্সিংয়ে প্রায় তিনশো পড়ুয়া রয়েছেন। তার সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অন্য কর্মীরাও আছেন। পাইপলাইনে জল আসা বন্ধ হওয়ায় সকলে সমস্যায় পড়েছেন।কংসাবতীর পিঁড়রা ঘাট থেকে পৃথক পাইপলাইন তৈরির আগে ক্যাম্পাসে ছ’টি গভীর নলকূপ খোঁড়া হয়। তার চারটি চালু রয়েছে। ওই উৎসগুলি থেকে যতটুকু জল মিলছে, তার পাশাপাশি ট্যাঙ্কারে করে বাইরে থেকে জল এনে কোনওমতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যালের এক কর্মীর কথায়, “এমন অবস্থা যে এ দিন দুপুরে শৌচাগারে গিয়ে জল পাইনি। খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।”
বেশ কিছু দিন আগে পুরনো ক্যাম্পাস থেকে বর্হিবিভাগ এই ক্যাম্পাসে সরে এসেছে। বহির্বিভাগে আসা শহর লাগোয়া কেতিকার বাসিন্দা মিঠুন বাউরি বলেন, “পানীয় জলের একাধিক কল রয়েছে। কিন্তু কোনও কলে জল নেই। বাইরে থেকে জল কিনতে হল।”
গত বুধবার জল-সমস্যা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তিরাম ছাড়াও জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন।
জয় বলেন, “ক্যাম্পাসে এত পড়ুয়া ও কর্মী রয়েছেন। এ ভাবে বাইরে থেকে জল এনে বেশি দিন চালানো যাবে না। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বৈঠক হয়।” সভাধিপতি জানান, দু’দিনের মধ্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে জল-সমস্যা মেটাতে বলা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, কংসাবতীর পিঁড়রা ঘাট থেকে মেডিক্যালের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসের জন্য পৃথক পাইপলাইন তৈরির জন্য স্বাস্থ্য দফতর ৮ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার (সিভিল) সুপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, কিছু দিন আগে নদীর কাছে একটি কালভার্টের গার্ডওয়াল ধসে যায়। তাতে পাইপলাইনটি ফেটে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, পাইপলাইন ফেটে গেলেও কেন তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হয়নি, সেই প্রসঙ্গ ওঠে বৈঠকে। ঠিকাদার সংস্থা কাজের পুরো টাকা না পাওয়ায় মেরামতের কাজে আগ্রহ দেখায়নি। দফতরের তরফে সেই বিষয়টি জানানোও হয়। বকেয়া অর্থের সংস্থান করে কী ভাবে পাইপলাইন মেরামত করা যাবে, তা নিয়ে দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
শান্তিরাম বলেন, “এটা ঠিক যে ওই কাজের জন্য দেড় কোটি টাকার মতো বকেয়া রয়েছে। কাজের নিরিখে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল। যদিও এটি দু’টি সরকারি দফতরের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু করবে বলে বৈঠকে ঠিক হয়েছে।”