অজয় নদের বাঁধের কাছেই চলছে বালি তোলার কাজ। খয়রাশোলের রসিদপুরে। নিজস্ব চিত্র।
ভূমিক্ষয় রোধে অজয় নদের ধারে বন দফতরের লাগানো গাছ অনুমতি ছাড়াই যন্ত্র লাগিয়ে কেটে বালি বহনের রাস্তা তৈরির অভিযোগ দিন কয়েক আগে উঠেছিল বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা ঘটেছিল খয়রাশোল ব্লকের শিরা মৌজায়। এ বার অজয় নদের ভাঙন আটকাতে তৈরি বাঁধ ঘেঁষে যন্ত্র লাগিয়ে বিপজ্জনক ভাবে বালি তোলার অভিযোগ উঠল খয়রাশোলের রসিদপুর মৌজায়।
বিপদের আশঙ্কা করে নদের ধারে বসবাসকারী বাসিন্দাদের একাংশ সেচ দফতরকে লিখিত ভাবে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেছেন। সেচ দফতরের আধিকারিকদের দাবি, বৈধ বালিঘাট কি না, তা নিয়ে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তবে বৈধ বালিঘাট হলেও যে ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীবাঁধের কাছ থেকে বালি তোলা হচ্ছে, তাতে বিপদ অবশ্যম্ভাবী বলেই তাঁদের মত। ঠিক কতটা বিপদ হতে পারে, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই এসডিও (হিংলো) গৌতম চট্টোপাধ্যায় লিখিত ভাবে জানিয়েছেন এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল), বিডিও (খয়রাশোল), ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, এবং খয়রাশোল থানায়। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন এলাকাবাসীর উদ্বেগও।
খয়রাশোলের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তরুণ কুমার দাস বলেন, ‘‘চিঠির প্রতিলিপি পেয়েছি। রসিদপুরে একটি বৈধ বালিঘাট রয়েছে। দেখতে হবে, লিজপ্রাপ্তেরা সঠিক ভাবে বালি উত্তোলন করছেন কি না। আমরা সোমবারই ওই এলাকা পরিদর্শন করব। যদি দেখা যায় নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বালি তোলা হচ্ছে, পুলিশে অভিযোগ করব।’’
বীরভূম ও দুই বর্ধমানের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে অজয় নদ। কিন্তু নদটি বীরভূমের দিকে ক্রমশ সরে আসছে। ভাঙনে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি। সমস্যা রুখতে ৫০০ মিটার নদী বাঁধ বোল্ডার দিয়ে বাঁধানোর সিদ্ধান্ত নেয় সেচ দফতর। বরাদ্দ হয়েছিল ৮৮ লক্ষ টাকা। গত বছরের প্রথম দিকে কাজ শুরু করে ২২৫ মিটার বাঁধের কাজ হয়। যে অংশে বাঁধ সংস্কারের কাজ হয়েছে, তা রসিদপুর মৌজা ঘেঁষা এবং সেখানে দুবরাজপুর পুরসভার জলপ্রকল্প রয়েছে।
সেই বাঁধের কাজের অডিট করতে শুক্রবার সেখানে একটি দল গিয়েছিল। ছিলেন সেচ দফতরের অধিকারিকেরা। বাঁধ ঘেঁষে যন্ত্র দিয়ে বালি তোলার বিষয়টি তখনই নজরে আসে। এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল) ললিত নারায়ণ সিংহ বলেন, ‘‘বালি উত্তোলন আমাদের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। তবে নদী বা বাঁধের সমস্যা হলে নিশ্চয়ই দেখতে হবে।’’ অন্য দিকে, এসডিও (হিংলো) গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যে ভাবে ২০ মিটার গর্ত খুঁড়ে বালি তোলা হচ্ছে, অজয়ে প্রচুর জল ছাড়া হলে ওই বাঁধ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এটুকু বলতে পারি।’’