প্রায় শুকিয়ে যাওয়া কংসাবতী জলাধার। ছবি: সুশীল মাহালি।
শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ পার হয়েছে। প্রায় শুকনো মুকুটমণিপুরে কংসাবতী জলাধাও। এই পরিস্থিতিতে সেচের জল দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কংসাবতী সেচ দফতর।
কংসাবতী সেচ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ ক্যানাল ও নদীগেটের মোহনায় জল নেই। জলাধারে জল নেই। তাই এখন কোনও ভাবে সেচের জল দেওয়া সম্ভব নয়। বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার চিত্তরঞ্জন রায় জানান, গত বছরে এ সময়ে প্রায় ৪২০ ফুট উচ্চতার বেশি জল ছিল জলধারে। প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেকটা কম থাকলেও পরে ভারী বৃষ্টিতে জলস্তর বেড়েছিল। তাঁর কথায়, “বর্তমানে জলাধারে ৪০৪.৮০ ফুট উচ্চতায় জল রয়েছে। এই মুহূর্তে সেচের জন্য জল দেওয়া সম্ভব নয়।” কংসাবতী লেফট ব্যাঙ্ক ফিডার সেচ ক্যানাল গেটেও গিয়ে দেখা গেল, জলের উচ্চতা মেরেকেটে ৫ ফুট। খাতড়া ব্লক এলাকার আমন চাষি বাহাদুর রজক, বিশ্বনাথ মাহাতো বা রানিবাঁধের তপন মাহাতোরা জানান, কিন্তু এ বারে বৃষ্টি না থাকায় চাষ মার খেতে বসেছে। আগামী দু-চার দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হলে চরম সমস্যায় পড়তে হবে চাষিদের। মহকুমা (খাতড়া) সহকারী কৃষি অধিকর্তা গণেশ সিং সর্দার বলেন, “জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আমন ধান রোপণের সময়। অন্য বছরে এ সময়ে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে চাষ হয়ে যেত। কিন্তু বৃষ্টি বা সেচের জলের সমস্যায় এ বারে এখনও ধান রোপণের কাজ সে ভাবে শুরু হয়নি।” তবে আগামী এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টি হলে ক্ষতি এড়ানো যাবে বলে দাবি তাঁর।
তবে চাষের জন্য জল দেওয়ার কথা জানিয়েছে ডিভিসি। সোমবার দুপুরে বর্ধমানের সার্কিট হাউসে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ, দুই বর্ধমান-বাঁকুড়া-হাওড়া-হুগলির জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, সেচ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বর্ধমান বিভাগের ডিভিশনাল কমিশনার বিজয় ভারতী। তিনি বলেন, “জলাধারে গত বছরের চেয়ে জল কিছু বেশি রয়েছে। ৭৫ হাজার একর ফুট পর্যন্ত জল ছাড়া সম্ভব হবে। বৃহস্পতিবার থেকে ১০ দিনের মতো জল ছাড়ার চেষ্টা হচ্ছে।একান্ত না হলে সাত দিন নিশ্চিত জল দেওয়া হবে।’’ আগামী ২ অগস্ট পরের বৈঠকে পরে কী ভাবে সেচের জল ছাড়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত হবে বলে খবর সূত্রের।
সেচ দফতর সূত্রে খবর, দক্ষিণবঙ্গে ডিভিসির আওতায় থাকা খরিফ মরসুমে সেচের জন্য এক লক্ষ ৮০ হাজার একর ফুট জলের প্রয়োজন হয়। সেখানে ৭৫ হাজার একর ফুট ডিভিসির কাছ থেকে পাওয়া যায়। কিছুটা ভূগর্ভস্থ জলে চাষ হয়। বড় অংশের চাষি বৃষ্টির উপরে নির্ভরশীল। আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গে শনি ও রবিবার ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।