দেওয়ালে ফাটল। নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ায়। ছবি: সঙ্গীত নাগ।
রাতবিরেতে খনির বিস্ফোরণের আওয়াজে কেঁপে উঠছে এলাকা, ফাটল ধরছে ঘরে। এ ভাবেই বাসিন্দাদের রাতের ঘুম কেড়ে ইসিএল কয়লা উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ। ঘটনা পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের পারবেলিয়া গ্রামের কোলিয়ারি এলাকার। বাসিন্দাদের দাবি, খনি থেকে কয়লা তুলতে অহরহ বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে, যার জেরে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বাড়ি ও রাস্তায় ফাটল ধরেছে। এ নিয়ে ইসিএলের ডিজিএমএস দফতরে গণস্বাক্ষর করে অভিযোগও জানান বাসিন্দারা। যার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গ্রাম পরিদর্শন করে গিয়েছে ইসিএলের একটি প্রতিনিধি দল। সংশ্লিষ্ট মহলে পরিদর্শনের রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ওই দল। তবে এতেও সুরাহা না হলে আগামীতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে গ্রামবাসী।
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, পারবেলিয়া খনির সিম থেকে কয়লা উত্তোলন প্রায় শেষ করে ফেলেছে ইসিএল। এখন পিলার থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে। আসলে যে কোনও কয়লাখনির সিম থেকে কয়লা তোলার সময়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে বেশ কিছুটা এলাকার কয়লা তোলা হয় না। সেখানে কয়লার পিলার বা থাম তৈরি করা হয়, যা খনিকে ধরে রাখে। ওই থামের জোরেই ধস প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু গ্রামবাসীর অভিযোগ, পারবেলিয়ায় সিমের কয়লা শেষ হওয়ার পরে এখন ইসিএল ‘ডি-পিলারিং’ শুরু করেছে। সেই প্রক্রিয়ায় কয়লার পিলার কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। স্থানীয় বৈদ্যনাথ সরেন, প্রবীর চট্টোপাধ্যায়, মুকুল মল্লিকরা বলেন, “ দিন দিন বিস্ফোরণের মাত্রা বাড়াচ্ছে ইসিএল। আমাদের কাছে খবর আছে বিশাল আকারের থাম থেকে সহজে কয়লা কাটতেই এত ঘন ঘন বিস্ফোরণ।” বাসিন্দারা জানান, গ্রামের শ-পাঁচেক বাড়ির মধ্যে কমবেশি ৬০-৬৫ শতাংশ বাড়িতেই ফাটল ধরেছে। এলাকায় গিয়ে দেখা যায় গ্রামের শুরু ও শেষের দিকে যে এলাকায় কয়লার পিলার রয়েছে, সেখানকার কয়েকটি বাড়ি, রাস্তা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় মুকুল মল্লিক বলেন, “বাড়ির দু’টি তলাতেই ফাটল ধরেছে। এ ভাবে বিস্ফোরণ চলতে থাকলে বাড়ি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।” ও দিকে স্থানীয় বৈদ্যনাথ সরেনের দাবি, শুধু বাড়ি নয়, চিনাকুড়ি মোড় থেকে গ্রাম পর্যন্ত সিমেন্টের ঢালাই রাস্তাতেও ফাটল দেখা দিয়েছে।
ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় ইসিএলের বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ আনছেন বাসিন্দারা। দাবি, ‘ডি-পিলারিং’ করতে ‘ডিরেক্টর জেনারেল অব মাইনস্ সেফটি’ দফতরের নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মানা হচ্ছে না। যদিও এ নিয়ে
ইসিএল কর্তৃপক্ষের কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।