চলছে বুথে বুথে সিপিএমের প্রচার। নিজস্ব চিত্র
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে এই প্রথম জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ বুথে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারল সিপিএম। এক মাসের ওই কর্মসূচির এখনও কিছু দিন বাকি রয়েছে। সিপিএম নেতাদের দাবি, এই সময়ে বাকি বুথগুলিতেও ওই কর্মসূচি পালন করা হবে৷
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে বুথে বুথে পদযাত্রা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাতে ভালই সাড়া মিলেছে। অনেক সিপিএম নেতা আড়ালে জানান, গত ১০ বছরে জেলায় নানা কর্মসূচি নিয়েছে সিপিএম-সহ অন্য বাম দলগুলি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেলার প্রতিটি বুথে কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, ৫০ শতাংশ বুথেও তাঁরা কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। এমনকি, মিটিং, মিছিলেও লোক জমায়েত করতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু এ বারের কর্মসূচির ইতিবাচক সাড়া তাঁদের নতুন আলো দেখাচ্ছে।
সিপিএম নেতারা জানান, এই জেলায় মোট ২,৬৬৩টি বুথ রয়েছে। তার মধ্যে শনিবার পর্যন্ত তাঁরা ১,৮৭৫টি বুথে নিজেদের কর্মসূচি করতে সক্ষম হয়েছেন। তার মধ্যে এমন কিছু গ্রাম রয়েছে, যেখানে দীর্ঘ সময় কোনও কর্মসূচি করতে পারেনি সিপিএম। যেমন, সাঁইথিয়া ব্লকের কল্যাণপুর, লাভপুর ব্লকের লাঙলহাটা, সদাইপুর থানা এলাকার রেঙ্গুনি, দুবরাজপুরের যশপুর ইত্যাদি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ২০১১ সালে পরিবর্তনের পরে রাজ্য জুড়ে বামের সংগঠন দুর্বল হয়ে যায়। ধীরে ধীরে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে বিজেপি। সেই হারানো জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম। পাশাপাশি, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিও তাঁদের সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানান সিপিএমের নেতারা। একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীদের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। সিবিআই, ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক নেতা মন্ত্রী। বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বর্তমানে জেলে রয়েছে। সম্প্রতি তাঁকে ইডি গ্রেফতার করেছে। আজ, মঙ্গলবার তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আবেদনের শুনানি হবে। এর জেরে শাসক দলের ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়েছে। বিশেষত জেলার মুসলিম প্রধান এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে তাঁরা। এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘মাস চারেক আগেও পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু এখন সব আসনে প্রার্থী দেওয়াই মূল লক্ষ্য।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে যে কোনও পার্থক্য নেই তা মানুষ এখন বুঝতে পারছে। একাধিক ইস্যুতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাই মানুষ বামকে ভরসা করছেন।’’ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষ ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতা এত তাড়াতাড়ি ভুলবে না। ওঁদের পুরনো যে কয়েক জন কর্মী ছিল, যাঁদের রামে (বিজেপি) পাঠিয়েছিল, তাঁরাই কিছু কিছু ঘুরে আসছে। তাঁদেরকে নিয়েই বুথে বুথে কর্মসূচি করছে।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দীপক দাস বলেন, সিপিএমকে মানুষ সুযোগ দিয়েছে। তার পরে বাতিল করেছে। মানুষ বিজেপিকে সুযোগ দেবে এবং আমরা প্রমাণ করে দেব।’’