টিএমসিপি-র মিছিল। (ইনসেটে) বোলপুর আদালতে সুলভ। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বভারতীর হস্টেলে হামলায় ঝাড়খণ্ড থেকে ধৃত সুলভ কর্মকারের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। রবিবার সুলভকে গ্রেফতার করে বীরভূম জেলা পুলিশ।
বুধবার রাতে বিদ্যাভবনের হস্টেলে ওই হামলার পরে বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করা হয় মূল দুই অভিযুক্ত অচিন্ত্য বাগদি ও সাবের আলি বক্সকে। তবে সুলভের খোঁজ মিলছিল না। রবিবার তাকে গ্রেফতারের পরে ট্রানজিট রিমান্ডে বোলপুর নিয়ে আসা হয়। সোমবার সুলভকে বোলপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল।
এ দিন আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পথে সুলভ দাবি করেন, ‘‘আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই, আমি একজন সাধারণ ছাত্র। আমি তৃণমূলের সমর্থক হতে পারি কিন্তু বিশ্বভারতীতে কোনও রাজনীতি করি না। এসএফআই এর ছেলেরা রাজনীতি করে চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে।’’ বিশ্বভারতীর এসএফআইয়ের লোকাল কমিটির সদস্য জয়দীপ সাহা, সোমনাথ সৌ-রা ওই অভিযোগ মানেননি। তাঁরা বলেন, ‘‘ছাত্রদের উপর হামলা হয়েছে ও যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’’
বিশ্বভারতীতে গণ্ডগোলের পরেই ‘বহিরাগত’দের নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘বিশ্বভারতীর বিষয়ে এমনিতে নাক গলাই না। তবে যাদবপুর থেকে কাউকে এনে বামপন্থীরা যদি ভাবে এখানে মস্তানি মারব, তা হলে তার তিন গুণ মস্তান কিন্তু বোলপুরে আছে। আমরা চাই বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা হোক। কাজ হোক।’’ রাজ্য সরকার বা শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিলে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন বলেই জানিয়ে দেন অনুব্রত।
শুক্রবার অনুব্রতর সেই ‘বার্তার’ পরে সোমবার বোলপুরে প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ রতনপল্লির নিমতলা মাঠ থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। মিছিলে বোলপুর-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি কলেজ থেকে পড়ুয়ারা মিছিলে অংশ নেন। মিছিলে কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী সামিল হয়েছিলেন। অনুব্রত বিশ্বভারতীর পরিস্থিতির জন্য উপাচার্যকে দায়ী করেছিলেন। সেই সুরেই এ দিন মিছিল থেকে বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উপাচার্যদায়ী করে স্লোগান দিতে দেখা যায় ছাত্রছাত্রীদের। ‘উপাচার্য গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও তোলা হয় মিছিল থেকে।
এ দিন রতনপল্লি থেকে মিছিল বের হয়ে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস পরিক্রমা করে মিছিলটি বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসে। সেখানে বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক ছাত্র-ছাত্রীদের। মিছিল শেষে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী বিশ্বভারতীর জায়গায় থাকবে, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে। যদি কেউ মনে করে বিশ্বভারতীকে
কলঙ্কিত করবে, কবিগুরুর ভাবধারাকে নষ্ট করবে, তাহলে তার প্রতিবাদে আমরা বারবার পথে নামব। এই উপাচার্য বিশ্বভারতীকে রাজনীতির মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছেন, তাই আমরা চাই এই উপাচার্য যেন অবিলম্বে পদত্যাগ করেন।’’