তখনও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। সংসদের গেটের বাইরে অপেক্ষা চাকরিপ্রার্থীদের।শুক্রবার রাতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
অনুত্তীর্ণদের একাংশের বিক্ষোভের জেরে টেট উত্তীর্ণদের নির্ধারিত কাউন্সেলিং শুরুই করতে পারেনি পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। শুক্রবার মাঝরাত অবধি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পরেও কার্যত ভেস্তেই গেল কাউন্সেলিং। আন্দোলনকারীদের থেকে গা বাঁচাতে নজিরবিহীন ভাবে শেষমেশ প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেই কাউন্সেলিং করার সিদ্ধান্ত নিল সংসদ!
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হেমন্ত রজক শনিবার বলেন, ‘‘আমরা নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি— ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে যে ১০৯২ জনের কাউন্সেলিং ছিল, সেই প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন করে (যে নম্বর তাঁরা ফর্মপূরণের সময় দিয়েছিলেন) কাউন্সেলিং করা হবে। তার পরে ডাকযোগে বাড়ির ঠিকানায় পাঠানো হবে নিয়োগপত্র।’’ এ দিন যাঁদের কাউন্সেলিং ছিল, দফতরে পৌঁছে নোটিসের কথা জানতে পেরে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান।
অবশ্য শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ সংসদের পক্ষ থেকে ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণার আগে দিনভর কার্যত নাটক চলে পুরুলিয়ায়। ওই অধীর উৎকণ্ঠা নিয়ে কাউন্সেলিংয়ে ডাক পাওয়া প্রার্থীরা শুক্রবার সকাল থেকে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরের সামনে। যদিও দ্বিতীয় দফায় ডাকা পেয়ে অপেক্ষারত ওই প্রার্থীরা কেউ-ই ওই দিন কাউন্সেলিংয়ে যোগ দিতে পারেননি। নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি— এই অভিযোগ তুলে কিছু পরীক্ষার্থী দফতরের সদর দরজার সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। সংরক্ষণ বিধি না মানার পাশাপাশি নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে, এমন অভিযোগও তোলেন তাঁরা। ওই আন্দোলনের জেরে দিনভর দফতরের দরজাই খোলেনি।
গভীর রাতে পুরুলিয়া জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন সংসদ সভাপতি হেমন্ত রজক। শুক্রবার রাতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বিক্ষোভের জেরে কাউন্সেলিং আটকে যাওয়ায় আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জেলাশাসকের দফতরে আলোচনায় বসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি। বৈঠকে ছিলেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক), পুলিশ সুপারও। হেমন্তবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি বলে যাঁরা অভিযোগ তুলছেন, বৈঠকে তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ ঠিক নয়। পাশাপাশি ওই বৈঠক থেকেই তাঁরা রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির সঙ্গেও কথা বলেছেন। তার পরেই তাঁরা বৈঠক ছাড়েন।’’ জানা গিয়েছে, রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত চলা ওই বৈঠক থেকেই জেলাশাসক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গোটা পরিস্থিতির কথা জানান। তিনি আগেই এই কাউন্সেলিংয়ের বিষয়টি নিয়ে দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্য মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কাছে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে বার্তা পেয়ে সংসদের পক্ষ থেকে গভীর রাতে অপেক্ষারত প্রার্থীদের মোবাইল-কাউন্সেলিংয়ের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। সংসদের এই সিদ্ধান্ত জানার পরে মাঝরাতে কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে পারলেও অনেকেই দফতরের সামনের মাঠেই এ দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
এ দিকে, নিয়োগে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি বলে যাঁরা অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, রাতভর অবস্থান করেন তাঁরাও। এ দিনও আগের দিনের মতোই যথারীতি তাঁদের বিক্ষোভ জারি ছিল প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের সদর দরজার বাইরে। এ দিনও রীতিমতো মাইক নিয়ে আন্দোলনকারীরা সভা করেছেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষে অজিত মাহাতো দাবি করেন, ‘‘সংসদ যে দাবি করছে, তা ঠিক নয়। ওবিসি-বি তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি। এ রকম একাধিক উদাহরণ রয়েছে। আমরা গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার তদন্ত চাই।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, জেলার প্রার্থীদের বঞ্চিত করে বাইরের প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া চলবে না। এই দাবিতে আন্দোলন চলবে। তাঁর দাবি, ‘‘আদিবাসী কুড়মি সমাজও এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে।’’