সতর্কতা: সিমলাপালের রাজাগোড়া গ্রামের বিভিন্ন দেওয়ালে এ ভাবেই লেখা হয়েছে করোনা-সচেতনতার বার্তা। নিজস্ব চিত্র
নলকূপের সামনে বোতলে রাখা সাবান-জল। সাবান-জল দেওয়া হয়েছে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। দু’ঘণ্টা অন্তর ‘কোভিড-বন্ধু’রা ধামসা বাজিয়ে গ্রামবাসীকে হাত ধোয়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। করোনা নিয়ে আর কী-কী সতর্কতা পালন করতে হবে, তা-ও লেখা রাস্তার ধারে প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে।
বাঁকুড়ার সিমলাপালের আদিবাসী অধ্যুষিত রাজাগোড়াকে এ ভাবেই করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতায় ‘মডেল গ্রাম’ হিসাবে গড়ে তোলার কাছ শুরু করেছেন মহকুমাশাসক (খাতড়া) রবি রঞ্জন।
রবিবাবু অবশ্য কৃতিত্ব নিতে নারাজ। বলেছেন, ‘‘কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে করোনাভাইরাসকে ঠেকিয়ে রাখা অনেকাংশে সম্ভব। সে জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কয়েকদিন ধরে আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের বাসিন্দারা সতর্কতা মেনে চলে নিজেরাই মডেল গ্রাম গড়ে তুলেছেন।’’ তিনি জানান, সিমলাপাল-খাতড়া রাস্তার ধারের এই গ্রামটিকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ, ‘মডেল গ্রাম’-এর কার্যকলাপ দেখে শেখার জন্য, যাতে প্রয়োজনে অন্যেরা সেখানে আসতে পারেন।
গ্রামে ৬০টি পরিবারের বাস। সকলেই তফসিলি জাতি ও জনজাতির। গ্রামে আছে তিনটি নলকূপ, নলবাহিত জল। আছে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আইসিডিএস কেন্দ্র। দুই মহিলা-সহ গ্রামের ১৩ জন সরকারি চাকুরিজীবী। বেসরকারি সংস্থাতেও কয়েকজন কাজ করেন। বাকিরা চাষের উপরে নির্ভরশীল।
করোনা-মোকাবিলায় প্রশাসনের এই উদ্যোগকে গ্রামের সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। মহকুমাশাসক ওই গ্রামে গিয়ে নিজেই করোনা-সতর্কতায় কিছু বাড়ির দেওয়ালে লিখেছেন। গোটা গ্রামে দেওয়াল লেখার কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় শিল্পী চন্দন রায়। ফাঁকে ফাঁকে গ্রামবাসীকে সচেতন করতে কী ভাবে সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে পাঠও দেওয়া চলছে। এসডিও বলেন, ‘‘শেখানো হচ্ছে হাত ধোয়ার পদ্ধতি। কী ভাবে ‘মাস্ক’ তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্ব কতখানি, তা নিয়েও গ্রামবাসীকে ধারণা দেওয়া হচ্ছে।’’
চন্দনবাবু জানিয়েছেন, গ্রামের প্রবেশপথে একটি তোরণে বসানো হচ্ছে ‘মাস্ক’ পরা পেঁচার মডেল। পাশে লেখা থাকবে গ্রামে ঢোকার যাবতীয় নিয়মকানুন। গ্রামের ভিতরে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী থাকবে বাঁশের তৈরি ‘ডাস্টবিন’।
গ্রামের অনেকেই ইতিমধ্যে সাবধানতা অবলম্বন শুরু করে দিয়েছেন। খুব জরুরি কাজ ছাড়া, বাড়ির বাইরে কেউ বার হচ্ছেন না। গ্রামের ১১ জন স্বেচ্ছায় ‘কোভিড-বন্ধু’র দায়িত্ব নিয়েছেন। গ্রামবাসীর ফোন পেলেই ‘কোভিড-বন্ধু’রা তাঁদের মুদিখানা থেকে আনাজ, রেশন থেকে ওষুধ বয়ে এনে দিচ্ছেন। ফলে, রাস্তাঘাট, দোকানে ভিড়ও কমে গিয়েছে। এসডিও জানান, পরবর্তী পর্যায়ে খাতড়া মহকুমার প্রতিটি গ্রামেই ‘কোভিড-বন্ধু’ ঠিক করা হবে।
‘কোভিড-বন্ধু’দের মধ্যে পদ্মলোচন মুর্মু, জ্যোতিলাল সোরেন, অশোক হেমব্রমেরা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম যদি অন্যদের সুস্থ থাকার দিশা দেখাতে পারে, তার চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না।’’