প্রতীকী ছবি
ফুচকা বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। নিজের গ্রাম ও কড়িশুণ্ডা পঞ্চায়েতের অনেক গ্রামে ঠেলা নিয়ে গিয়ে সারা বছর ধরে আমি ফুচকা বিক্রি করি। নিজের কোনও জমিজমা নেই। যা রোজগার, তা এই ফুচকার ঠেলা থেকেই। লকডাউন-এর আজ প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চলল। কোথাও বেরোইনি।
অবস্থা যদি এ রকম চলতে থাকে, কী ভাবে আমাদের দিন চলবে জানি না। ভেবেই অস্থির লাগছে।
দুই ছেলে, মা, বাবা এবং স্ত্রীকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে যায় আমার। এক দিন হঠাৎ শুনলাম, ‘করোনা’র জন্য স্কুলগুলো সব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। একটা রোজগারের জায়গা বন্ধ হয়ে গেল।
তার কিছু দিন পরে ফুচকা খেতে আসা লোকজনের কাছে শুনলাম, সব বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্বাস করিনি। এমনটা হতে পারে, না কি? তা হলে বন্ধ হওয়ার আগের দিন এত ফুচকা বানাতাম না। এখনও লকডাউনের আগের ফুচকা রয়ে গিয়েছে। কী করব, এত ফুচকা নিয়ে? বাড়িতে জমে নষ্ট হচ্ছে ফুচকা।
দিন আনি দিন খাই। রোজগার তো গেছেই। আবার অনেক টাকার মাল বাড়িতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে সংসার চালাতে। জানি না, কত দিন এ ভাবে কাটবে।
দিনে ফুচকা বিক্রি করে ৩০০ টাকা মতো লাভ হয়। এই সামান্য রোজগারে ভবিষ্যতের কথা ভেবে টাকা জমানো কি কোনও ভাবে সম্ভব ছিল! তার মধ্যেও যা জমিয়েছিলাম আস্তে-আস্তে তা ফুরোতে শুরু করেছে। সরকারের তরফে চাল, আটা দেওয়া হচ্ছে। নিয়েও এসেছি। কিন্তু শুধু ভাত কি আর খাওয়া যায়?
কিছু মশলাপাতি, আনাজও তো কিনতে লাগে। এর পর থাকে জ্বালানির খরচ। তার উপরে বয়স্ক বাবা-মা এর ওষুধ খরচ। জমানো টাকা ফুরিয়ে গেলে এ সবের জন্য কোথায় টাকা পাব জানি না। কোনও দিন কারও কাছে হাত পাতিনি। এখন দেখছি, তা-ও করতে হবে। কবে যে রোজগার ফিরে পাব কে জানে!