West Bengal Lockdown

হিমাচলেও আটকে ৩ পরিবার, ট্রেনের আশা মুম্বইয়ের শ্রমিকদেরও

রুজির টানে রাজমিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে তাঁরা মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি ও রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০১:৫১
Share:

একরাশ হতাশার মধ্যে বীরভূমের শেখ শাহজাহান লালন শেখ, আব্দুল করিম, রোসাই খানেরা ক্ষীণ আলোর রেখা পেয়েছেন ট্রেনে শ্রমিক ফেরার খবর জেনে।

কেরল ও রাজস্থান থেকে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যদের রাজ্যে ফেরাতে বিশেষ ট্রেন ছেড়েছে, এই খবরেই আশায় বুক বাঁধছেন বীরভূমের শেখ শাহজাহান লালন শেখ, আব্দুল করিম, রোসাই খানেরা। আশা, এ বার বোধহয় বাড়ি ফেরার সুযোগ হবে।

Advertisement

রুজির টানে রাজমিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে তাঁরা মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন। এখন আস্তানা মুম্বইয়ের মসজিদ বন্দর এলাকার ছ’টি ঝুপড়িতে। লকডাউন শুরু হওয়া ইস্তক ভিন্ রাজ্য আটকে থাকা বহু শ্রমিকের মতো বেকায়দায় রয়েছেন শাহজাহান, লালন, রোসাইরা। হাতে থাকা টাকাও প্রায় ফুরিয়েছে। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে প্রশাসনের আনুকুল্য মিলেছে। দু’বেলা দু’মুঠো জুটছে । কিন্তু এ ভাবে কত দিন কাটাতে হবে, সেই দুশ্চিন্তায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সকলেই।

একরাশ হতাশার মধ্যে ক্ষীণ আলোর রেখা পেয়েছেন ট্রেনে শ্রমিক ফেরার খবর জেনে। মুম্বইয়ে আটকে থাকা শ্রমিকেরা বলছেন, ‘‘প্রথমে রাজস্থানের কোটা থেকে পড়ুয়াদের ফেরানোর সংবাদ পেয়েছিলাম। তারপর শুনলাম রবিবার রাজস্থান থেকে আর সোমবার কেরল দুটো ট্রেনে ওই দুই রাজ্যে আটকে পড়া বাংলার শ্রমিক, কিছু তীর্থযাত্রী এবং পড়ুয়াকে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়েছে। তাই মনে হচ্ছে এ বার বোধহয় আমরাও বাড়ি ফিরতে পারব।’’

Advertisement

শাহজাহানরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে আবেদনপত্র এনে তাতে নাম ও আধার নম্বর দিয়ে পূরণ করে ফেলেছেন। বিভিন্ন রাজ্য তাদের লোকেদের ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজ্যে ফেরত যাচ্ছেন এখানে আটকে থাকা শ্রমিকেরা। যদিও শাহজাহানদের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় থানা ও প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে, ‘এখনও তোমাদের রাজ্য থেকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়নি। যোগযোগ করলেই তোমাদের জানানো হবে।’ কিন্তু সেটা কবে হবে, কখন আমাদের রাজ্যের তরফে সবুজ সঙ্কেত মিলবে বুঝতে পারছি না।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতিতে বাইরের রাজ্য থেকে আসা লোকজনের মাধ্যমে সংক্রমণ যে বেড়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কার কথা বিবেচনায় রেখে সব রকম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিয়ে এগোতে চাইছে রাজ্য সরকার।

করোনা সংক্রমণ এড়াতে লকডাউনের মধ্যে দীর্ঘদিন ভিন্ রাজ্যে আটকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত গরিব শ্রমিক, রোগী, ছাত্র-ছাত্রী থেকে বেড়াতে যাওয়া মানুষজন সকলেই। তাঁরা ঘরে ফিরতে উদগ্রীব। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ রাজ্যে থাকা তাঁদের পরিজনেরা। বেড়াতে গিয়েই হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপতক্যার পালমপুরে আটকে রয়েছেন বীরভূমের তিনটি পরিবারের নয় সদস্য। দু’টি পরিবার মল্লারপুর থানা এলাকার। একটি পরিবার সদাইপুরের। আনন্দ গড়াই, বিপত্তারণ মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘প্রথমে বেশ কিছু দিন দিনে আটশো টাকা দিয়ে স্থানীয় একটি লজে, পরে সেনাবাহিনীর অতিথিশালায় দৈনিক দুশো টাকা ভাড়ায় থাকার পাশাপাশি খাবার জোটাতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, তাতে আর টানা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ‘দিদিকে বলো’-তে জানিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকেও সাড়া নেই। কী করব বুঝতে পারছি না।’’

বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘কোন রাজ্য থেকে কারা ফিরবেন, সেটা রাজ্য প্রশাসন ঠিক করছে। সেভাবে আমাদের কাছে তালিকা চাওয়া হচ্ছে সেটা আমরা রাজ্যকে জানাচ্ছি।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement