উড়ন্ত: মহম্মদবাজারে ড্রোনে নজরদারি। ছবি: পাপাই বাগদি
রাস্তাঘাটে অবাঞ্ছিত ভিড় হয়েছিল সোমবার। তা রুখতে এ বার রাস্তায় নামলেন জেলা পুলিশের কর্তারা। মঙ্গলবার দিনভর সিউড়ি শহরের অলিতে-গলিতে অভিযান চালায় পুলিশ। সরজমিনে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ-সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, লকডাউন অমান্য করায় জেলায় মোট ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১১৪টি মোটরবাইক, টোটো ও ছোট গাড়ি।
সোমবার থেকে লকডাউনে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। সেই সুযোগে নিয়ে প্রচুর মানুষ অহেতুক রাস্তায় নেমে পড়েন। কোনও কোনও জায়গায় যে লকডাউন ১০০ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে না, তা উল্লেখ করে সোমবার রাতে জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে অত্যাবশকীয় পণ্য ছাড়াও কিছু দোকান লুকিয়ে লুকিয়ে খোলা হচ্ছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে অনেকেই আর্থিক ভাবে বিপন্ন। তাঁদের সুবিধার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে সকলকে বিধি-নিষেধ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এর পরেই এ দিন সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সিউড়ি শহরে পুলিশের বিশেষ তৎপরতা দেখা গেল। দিনভর শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে নাকা তল্লাশি চলে। প্রথমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবিমল পাল এবং ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি) অভিষেক মণ্ডলের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী শহরে অভিযান চালান। যাঁরা বাড়ির বাইরে বেরিয়েছেন, তাঁদের দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। প্রমাণ-সহ যথার্থ উত্তর না দিতে পারলে ওই ব্যক্তি কিংবা তাঁর বাইক-গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এ ছাড়া লকডাউনের আওতায় থাকা যে-সব দোকান সোমবার খুলেছিল, সেগুলি বন্ধ করা হয়। সংশ্লিষ্ট দোকানিকে আটকও করা হয়। দুপুর একটা নাগাদ পুলিশ সুপার শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে লকডাউন পরিস্থিতি দেখেন। তখনও অনেককে আটক করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউন সার্থক করতে নাকা তল্লাশি এবং অভিযানের পাশাপাশি শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়-- বাসস্ট্যান্ড, চৈতালি মোড় এবং মসজিদ মোড়ে ব্যারিকেড লাগানো হয়েছে। যাতে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী প্রত্যেকের তল্লাশি করা যায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবিমলবাবু বলেন, ‘‘আমরা কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছিলাম, কিছু মানুষ অহেতুক বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন। তাই জেলা জুড়ে এ দিন অভিযান চলেছে।’’
এ দিন সকালে দুবরাজপুরেও অকারণে কেন রাস্তায়, সেই প্রশ্নের উত্তর নিতেই রাস্তায় নেমেছিলেন ডিএসপি (সদর) কাশীনাথ মিস্ত্রি, আইসি দুবরাজপুর। বোলপুর শহরেও রাস্তায় নামেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবপ্রসাদ পাত্র, এসডিপিও অভিষেক রায়। পুলিশ ঠিক করেছে, এ বার থেকে বোলপুরে একটি বাইক বা গাড়ি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আনতে দু’বারের বেশি বেরোতে পারবে না। বেশ কিছু বাইক ও গাড়িতে এই মর্মে স্টিকারও লাগানো হয়। মহম্মদবাজার থানার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার নাকা তল্লাশি চালানো হয় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। এ ছাড়াও সিআই (সদর) অভিষেক চট্টোপাধ্যায় এবং ওসি (মহম্মদবাজার) মহম্মদ আলির নেতৃত্বে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও বেশ কিছু এলাকায় ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হয়। লকডাউন সফল করতে সাঁইথিয়া শহরেও পুলিশ নাকা চেকিং করে। বাইরে থেকে আসা কাউকেই শহরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একমাত্র জরুরি প্রয়োজনে যাঁরা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এসেছেন, তাঁদের উপযুক্ত কাগজপত্র দেখার পরেই ঢুকতে দেওয়া হয়।