সচল-অচল: ১) দূরত্ব রেখেই ব্যাঙ্কমিত্রের লেনদেন বান্দোয়ানের পারগেলা গ্রামে। ২) ইঁদপুর বাংলা বাজারে বন্ধ এটিএম। ৩) রঘুনাথপুরের মুন্সেফডাঙায় দূরত্ব রেখে লাইনে গ্রাহকেরা। নিজস্ব চিত্র
ব্যাঙ্কে নগদের জোগানের অভাব চলছে। এর মধ্যে আবার কিছু এটিএম-এ টাকা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠল। তবে, সেই সংখ্যাটা বিশেষ নয়। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। যেখানে এটিএম-এ টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তার অধিকাংশ জায়গায় আবার ৫০০ বা হাজার টাকার কম নেই বলে ক্ষোভ গ্রাহকদের। এই পরিস্থিতিতে অবশ্য গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বড় ভরসা হয়ে উঠেছে ব্যাঙ্ক মিত্রেরা।
শনিবার ব্যাঙ্ক মিত্রদের ভূমিকার প্রশংসা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন উদাহরণ হিসেবে পুরুলিয়ার ব্যাঙ্ক মিত্রদের সাহসী বলে উল্লেখ করেছেন।
‘লকডাউন’ চলতে থাকায় সব ব্যাঙ্ক রোজ খোলা হচ্ছে না। তাই ভরসা এটিএম। কিন্তু শনিবার ও রবিবার দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কিছু এটিএম-এ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও আবার বন্ধ।
রঘুনাথপুর শহরে এটিএমের সংখ্যা আটটি। এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, তার মধ্যে মুনসেফডাঙার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা থাকলেও ওই ব্যাঙ্কেরই নতুন বাজারের এটিএম বন্ধ। খোলা থাকলেও টাকা নেই পুরাতন বাজারের এটিএমেও। পুরভবন লাগোয়া একটি এটিএম-ও বন্ধ ছিল। রঘুনাথপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি এটিএম খোলা থাকলেও, সেখান থেকে টাকা মিলছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ঝালদাতে সব ক’টি এটিএম খোলা থাকলেও অনেকগুলিতেই টাকা পাওয়া যায়নি বলে দাবি গ্রাহকদের একাংশের। স্থানীয় বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাস পয়লাতে এটিএম থেকে যাতে সরকারি কর্মীদের বেতন ও পেনশন পেতে সমস্যায় না পড়তে হয়, সেই বিষয়ে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
বাঁকুড়া শহরের বেশির ভাগ এটিএম অবশ্য সচল রয়েছে বলে গ্রাহকেরা জানাচ্ছেন।
জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রমেশ প্রসাদ বলেন, “জেলার বেশির ভাগ এটিএমই স্বাভাবিক পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোথাও অচল রয়েছে এমন অভিযোগ পাইনি। তবে সার্বিক পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রেখে চলেছি।” ‘অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সাগর রায় বলেন, “টাকা জমা করার প্রবণতা এই কয়েক দিনে অন্তত ৮৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে এনে গ্রাহকদের দিচ্ছি আমরা। এটিএম সচল রয়েছে।”
গ্রামাঞ্চলে সচল রয়েছে ব্যাঙ্ক মিত্রদের পরিষেবা। বাঘমুণ্ডির একরা গ্রামের বাসিন্দা মনোহর মাঝি পেশায় কৃষক। তিনি জানান, এখন ধারবাকি রেখে কেনাকাটা করা যাচ্ছে না। তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ দিন মাঠার ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। এলাকার ব্যাঙ্ক মিত্রের বাড়ি ১০ কিলোমিটার দূরে বাঁশিটাঁড় গ্রামে। সেখানে গিয়ে ব্যাঙ্ক মিত্রের কাছ থেকে ১০০০ টাকা তুলেছেন। বাঘমুণ্ডির বাসুডি গ্রামের সন্তোষ সিং-ও কৃষক। এ দিন ওই ব্যাঙ্ক মিত্রের কাছে গিয়ে তিনিও টাকা তোলেন বলে জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পুরুলিয়া জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক মিলিয়ে মোট ১৭২টি শাখা রয়েছে। কিন্তু জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭৩টিতে কোনও ব্যাঙ্ক নেই। এই মুহূর্তে জেলায় ব্যাঙ্ক মিত্র রয়েছেন ১৭৬ জন। পুরুলিয়া জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সৌরভ সাহা বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ব্যাঙ্ক মিত্রদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’’
পুরুলিয়ার ব্যাঙ্ক মিত্রেরা কাজ করছেন যে সংস্থার মাধ্যমে তার টেরিটরি ম্যানেজার নীলাদ্রি দে বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক মিত্রেরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে গ্রাহকদের টাকা দেন। তাঁরা মাস্ক পরে, স্যানিটাইজ়ার বা সাবান ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করছেন।’’