একাকী: ফাঁকা রাস্তায় ছেলেেক কোলে নিয়ে আশিস। নিজস্ব চিত্র
ছেলের পা ভেঙেছে রবিবার বিকেলে। কোনও চিকিৎসক না থাকায় ছেলেকে কোলে নিয়ে হেঁটে চিকিৎসকের চেম্বারে পৌঁছে তার পায়ের প্লাস্টার করালেন বাবা ও ঠাকুরমা। দু’পিঠের যাতায়াত মিলে ছেলে কোলে ৩৪ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে তাঁদের! ফেরার সময় বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের কয়েক জন যুবক এই করুণ অবস্থা দেখে একটি ছোট গাড়ি ডেকে বাড়ি পৌঁছে দেন তাঁদের।
বীরভূমের মুরারই থানার বলিয়া গ্রামে বাড়ি দিনমজুর আশিস কোনাইয়ের। তাঁর দশ বছরের ছেলে বিদ্যুৎ রবিবার খেলতে গিয়ে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পায়। লকডাউনের সময় মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে কোনও হাড়ের চিকিৎসক না থাকায় সমস্যায় পড়ে পরিবার। আশিস বলেন, ‘‘গ্রামের চিকিৎসকের থেকে ব্যথার ওষুধ খাইয়েছিলাম। কিন্তু, খুব কাজ দেয়নি। সোমবার ছেলের পায়ে যন্ত্রণা সাংঘাতিক বেড়ে যায়।’’ তিনি জানান, ছোট গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাব ভেবেছিলেন। কিন্তু, লকডাউনের ফলে দীর্ঘদিন রোজগার না থাকায় সংসার চালাতে সঞ্চয়ের সমস্ত টাকা শেষ। হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে পারেননি।
তা-ও ভেবেছিলেন মুরারই থেকে কোনও গাড়ি পাবেন। কিন্তু লকডাউনের জন্য কোনও গাড়ি যেতে রাজি হয়নি। ছেলেকে ছটফট করতে দেখে মঙ্গলবার সকালে তাকে কোলে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাবা। সঙ্গে ছিলেন বিদ্যুতের ঠাকুরমাও। বাড়িতে আর এক শিশুসন্তান থাকায় আশিসের স্ত্রী বেরোতে পারেননি। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছন প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে, নলহাটিতে। সেখানে ব্যক্তিগত চেম্বারে এক অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ দেখেন বিদ্যুৎকে। এক্স-রে করে দেখা যায় বিদ্যুতের গোড়ালির কাছে হাড় ভেঙেছে। প্লাস্টার করে বাড়ি ফেরার জন্য নলহাটি শহরে কোনও যানবাহন না পাওয়ায় ফের হাঁটা শুরু। বিকেল তিনটেয় মুরারইয়ের কিছু যুবক তাঁদের দেখে একটি গাড়ি করে তাদের বাড়ি পৌঁছে দেন।
স্থানীয় যুবক বিপ্লব শর্মা, ইন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘কোলে বাচ্চা নিয়ে ওঁদের হাঁটতে দেখে আমরা সমস্ত জানি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাই আমরা গাড়ি করে বাড়ি পোঁছে দিয়েছি।’’ আর আশিস বলছেন, ‘‘মুরারইয়ের দাদাদের সঙ্গে নলহাটি যাওয়ার সময় দেখা হলে আমাদের কষ্ট করে হেঁটে চিকিৎসকের কাছে যেতে হত না।’’