Coronavirus

স্তব্ধ সেলের বাজার, আক্ষেপ

প্রতি বছর শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলের দোকানগুলিতে মার্চের মাঝামাঝি থেকে জমজমাট চৈত্রসেলের বাজার বসে। মূলত কাপড় এবং জুতোর দোকানগুলিতে পা রাখার জায়গা থাকে না।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০২:২৩
Share:

সেলের সময়েই তালাবন্ধ কীর্ণাহারের দোকান। ছবি: কল্যাণ আচার্য

দরজা বন্ধ দোকানের ভিতরে স্তূপাকার হয়ে পড়ে আছে জামা-কাপড় কিংবা চটি-জুতো। বাইরে ঝুলছে ‘ডিসকাউন্টের’ বোর্ড। সেই সব দেখেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে দোকানদারদের। হাহুতাশ ক্রেতাদের গলায়।

Advertisement

প্রতি বছর শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলের দোকানগুলিতে মার্চের মাঝামাঝি থেকে জমজমাট চৈত্রসেলের বাজার বসে। মূলত কাপড় এবং জুতোর দোকানগুলিতে পা রাখার জায়গা থাকে না। ব্যবসায়ীরা তাঁদের অবিক্রিত লাট খাওয়া জিনিসপত্র বাছাই করে রেখে দেন সেলে বিক্রির জন্য। জিনিসের মান অনুযায়ী ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মেলে কেনাকাটায়। সেলের অপেক্ষায় থাকনে শহর-গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ। এ জন্য আলাদা করে টাকাপয়সা জমিয়ে রাখেন তাঁরা।

কিন্তু এ বার করোনাভাইরাসের কোপে সেই চৈত্র সেলের বাজার পুরোপুরি মার খেয়েছে। সেলের বাজার শুরু হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় লকডাউন। অনির্দিষ্ট কালের জন্য দোকানে দোকানে ঝাঁপ পড়ে যায়। গৃহবন্দি হয়ে পড়েন মানুষজন। এখন বন্দিদশার চেয়েও অনেকের মুখে চৈত্রসেলের কেনাকাটা হাতছাড়া হওয়ার হাহুতাশ বেশি শোনা যাচ্ছে। লাভপুরের ষষ্ঠীনগরের বধূ সুনীতা পাল, কীর্ণাহার পশ্চিমপাড়ার নমিতা মণ্ডল বলছেন, “অন্যান্য বছর আমরা সারা মাস ধরে চৈত্র সেলের জিনিস কিনি। পরিবারের সবার জন্য সারা বছরের চটি-জুতো, পোশাক কিনে রাখি। এ বার আর সেই সুযোগ পেলাম না। সেলের বাজার শুরু হতে না হতেই লকডাউন হয়ে গেল। এমন হবে জানলে যে ক’দিন সুযোগ ছিল, তার মধ্যেই কিনে নিতাম।“

Advertisement

ময়ূরেশ্বরের কোটাসুরের অনিমা রায়, আমোদপুরের বাসন্তী সরকারের আক্ষেপ, “সেলে কেনাকাটার জন্য আমরা টাকা জমিয়ে রাখি। দূর

গ্রামের আত্মীয়েরাও তাঁদের পচ্ছন্দসই জিনিসপত্র কিনে রাখার জন্য টাকা পাঠিয়ে দেন। এ বার সব মাঠে মারা গেল! এমন হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।’’

হাহুতাশ ব্যবসায়ীদেরও কম নয়। চৈত্রসেলের জন্য তাঁরা জিনিসপত্র বাছাই করে রেখেছিলেন। দোকানে দোকানে মজুত ছিল জামকাপড়, চটি, জুতো। কেউ বা জনবহুল জায়াগায় গেট তৈরি করে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। লকডাউনের জেরে তাঁদেরও অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। নানুর সুপারমার্কেটের জুতো ব্যবসায়ী সুভাষ মুস্তাফি, কীর্ণাহারের শান্তনু দাস বলেন, “আমরা ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিই। প্রতি বছর এই সময়টায় গড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকার চটি জুতো বিক্রি হয়।

এ বার লকডাউনের আগে মাত্র তিন দিন পাওয়া গিয়েছে। তখনও বাজার তেমন জমেনি। মাত্র হাজার দুয়েক টাকার বিক্রি হয়েছে।“ বাছাই করে রাখা চটি-জুতো বেশিদিন আটকে থাকলে রং ও পেস্টিং নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

ক্ষতির মুখে পড়া কীর্ণাহারের বস্ত্র ব্যবসায়ী রাধাকান্ড মহান্ত, সুবীর মণ্ডলদের দাবি, অন্যান্য বছর ৩-৪ লক্ষ টাকার চৈত্র সেল হয় । এ বার ২০-২৫ হাজার টাকাও হয়নি। চৈত্রসেলের জন্য বাছাই করে রাখা জামাকাপড় ফের সরিয়ে রাখাটাই এখন সমস্যার।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement