প্রতীকী ছবি
আক্রান্তদের সেরে ওঠার হার বীরভূমে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত সাড়ে চারশোর গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জেলায়। সেই জন্য উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গ রয়েছে, এমন করোনা রোগীকে কোভিড হাসপাতালে না রেখে প্রশাসনের উদ্যোগে ‘সেফ হোমে’ পাঠানো শুরু হয়েছে রবিবার থেকেই। এ যাবত বীরভূমে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশ উপসর্গহীন। প্রশাসনের উদ্দেশ্য, উপসর্গহীন রোগীদের দিয়েই জেলার দুই কোভিড হাসপাতালের সীমিত সংখ্যক বেড পূর্ণ না করে উপসর্গযুক্ত ও সঙ্কটজনক করোনা রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। রামপুহাট মহকুমায় সেফ হোমে ইতিমধ্যেই উপসর্গহীন কোভিড আক্রান্তদের রাখা হয়েছে। বোলপুরের সেফ হোমও প্রস্তুত। দু-একদিনের মধ্যে দুবরাজপুরের নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালের সেফ হোম উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযু্ক্তদের রাখার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
গত ৩০ এপ্রিলে বীরভূমে প্রথম তিন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলে। হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকেরা জেলায় ফিরতেই হু হু করে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। বোলপুর এবং রামপুরহাট কোভিড হাসপাতালের সীমিত সংখ্যক বেড (এখনও পর্যন্ত মোট ৮০ শয্যা) থাকায় উপসর্গযুক্ত রোগীদের বাইরে এত সংখ্যক উপসর্গহীন রোগীর চিকিৎসা কোথায় হবে, বা তাঁদের আলাদা করে রাখা যায়, জেলা প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, অধিকাংশ উপসর্গহীন রোগীরই বাড়িতে আলাদা ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। মে মাসের শেষের দিকে রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে তাই সেফ হোম গড়ার দিকে ঝোঁকে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বোলপুরের মলয়পীঠে ও রামপুরহাট মহকুমায় তারাপীঠে ঢোকার আগে একটি লজকে উপসর্গহীন কোভিড হাসপাতাল হিসেবে গড়ার অনুমোদন পায় জেলা। সেখানে শয্যা সংখ্যা আড়াইশোটি। গত মাসে দুবরাজপুরের বন্ধ থাকা যক্ষ্মা হাসপাতালকে ১৬২ শয্যার কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এতদিন জেলায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম থাকায় সমস্যা হয়নি। কিন্তু গত কয়েক দিন ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দুই স্বাস্থ্য জেলার কোভিড হাসপাতালগুলির বেড স্বাভাবিক ভাবেই প্রায় ভর্তি হয়ে যাচ্ছিল।
দুই স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে খবর, সোমবার রামপুরহাট ৪০ শয্যা বিশিষ্ট কোভিড হাসপাতালে ২৮ জন আক্রান্ত ছিলেন। অন্যদিকে বোলপুর কোভিড হাসপাতালের ৪০ শয্যার ৩২টি কোভিড রোগীদের দখলে ছিল। মঙ্গলবার ১৯ জন কোভিড রোগীর এমন সেফ হোমেই ঠাঁই হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগীদের দু’বেলা দেখভালের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকছেন সেফ হোম বা উপসর্গহীন কোভিড আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালে। থাকছে অ্যাম্বুল্যান্সও। সেফ হোমগুলি বোলপুর ও রামপুরহাট কোভিড হাসপাতালের সঙ্গে ‘ট্যাগ’ হয়ে আছে। সেখানে আক্রান্তদের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ওই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে।
বেশি উপসর্গযুক্ত বা সঙ্কটজনক কোভিড রোগীদের জন্য কোভিড হাসপাতালে শয্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। প্রচুর সংখ্যায় চিকিৎসক নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, ভেন্টিলেটর-সহ পরিকাঠামো না থাকায় আলাদা করে সেই চিকিৎসা কেন্দ্র গড়া সম্ভব নয়। তাই ঠিক হয়েছে, বোলপুর কোভিড হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৮০টি করা হবে। হাসপাতালের দোতলা ফাঁকা রয়েছে, শয্যা বাড়ানো হবে সেখানেই। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে এমন খবর নেই।
জেলাশাসক বলছেন, ‘‘বোলপুর কোভিড হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’’ বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি জানান, কাজ চলছে। দ্রুত শয্যা সংখ্যা বাড়বে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)